‘বৈশ্বিক ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ জাতিসংঘ’
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:৩২
ঢাকা: বাংলাদেশের মতো অনেক দেশেই অভিবাসনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে, যেগুলো জাতিসংঘে অবহেলিত হচ্ছে। কিন্তু একই সময়ে কয়েকটি শক্তিশালী দেশ আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছে। পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে জাতিসংঘ অনৈতিক ও অনায্য একটি সংস্থা হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। বৈশ্বিক ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ এবং এই ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে সাম্য নিশ্চিত করা এখন এই সংস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
জাতিসংঘের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের প্রথম দিনে এক অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য জাতিসংঘকে পরামর্শ দিতে গিয়ে তারা এমন মন্তব্য করেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্টাডি ও জাতিসংঘ যৌথভাবে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর কাছে জাতিসংঘ অনৈতিক ও অনায্য একটি সংস্থা হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা ও দেশের সার্বভৌমত্বের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ এবং এই ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে সাম্য নিশ্চিত করা এখন এই সংস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
জাতিসংঘকে কয়েকটি বড় দেশের ক্লাব হিসেবে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, যে দেশ যতবেশি শক্তিশালী, সেই দেশ ততবেশি জাতিসংঘ নীতি লঙ্ঘন করে থাকে। জাতিসংঘ ছোট দেশগুলোর সমস্যার সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেয় না এবং বড় দেশগুলো জাতিসংঘের নীতি পদদলিত করে।
ছোট দেশগুলোর দর্শন ও ইচ্ছার প্রতিফলন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ডক্যুমেন্টে নেই জানিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব যে মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে, ওই মানদণ্ডে সারাবিশ্বে মানবাধিকারকে পরিমাপ করা হয়। সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই ব্যবস্থা দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন মিজানুর রহমান।
অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, জাতিসংঘের গুরুত্ব নির্ভর করবে প্রতিটি দেশের জনগণ তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়বদ্ধ কতটুকু নিশ্চিত করতে পারে, তার ওপর।
কোভিড-১৯ নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়ার দায়িত্ব জাতিসংঘের। কারণ এই মহামারির কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার খারাপ অবস্থা জনসমক্ষে চলে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবাধিকারের ভিতরে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতি জোর দেন তিনি।
জর্ডানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বিষয়াবলীর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আলোচনা চলমান আছে।
জাতিসংঘের সফলতা ও ব্যর্থতা মেনে নিয়ে নাহিদা সোবহান বলেন, জাতিসংঘ এখনো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সবচেয়ে বড় বহুপক্ষীয় সংস্থা, যেখানে সব দেশ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলতে পারে। তবে অভিবাসী বিষয়টি জাতিসংঘে অবহেলিত বিশেষ করে মহামারি সময়ে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ড. নমিতা হালদার কোভিড-১৯-এর টিকা বণ্টনের বিষয়ে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, শিক্ষা খাতে বাজেট আরো বাড়াতে হবে। কারণ এটি মৌলিক অধিকার।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার এশিয়া প্যাসিফিক সেকশনের প্রধান ররি মানগুভেন বলেন, মিয়ানমারে সমস্যা প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশকে অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত জানিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দিন তাদের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য জাতিসংঘকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক সময়ে শান্তিরক্ষী বাহিনী স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করে থাকে।
নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দূত মারিতা সোরহেইম-রেনসভিক বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের কাছ অনেক কিছু শেখার আছে।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফ্যাবরিজিও হশচাইল্ড জাতিসংঘ ঠিকমতো কাজ করছে জানিয়ে বলেন, তবে অনেকে মনে করে এখন জাতিসংঘের প্রয়োজন রয়েছে মৌলিক সেবা প্রদান করার জন্য।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ার এম এ কাশেম বলেন, বর্তমান সমস্যা-সংকুল সময়ে জাতিসংঘ একমাত্র সংস্থা যা সবদেশকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে পারে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার ওপর সবসময় জোর দিয়ে থাকেন।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দিন এনএসইউ এম এ কাশেম ওয়েবিনার জাতিসংঘ জাতিসংঘ দিবস ড. নমিতা হালদার নাহিদা সোবহান ফারাহ কবির ফ্যাবরিজিও হশচাইল্ড বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম মারিতা সোরহেইম-রেনসভিক ররি মানগুভেন