জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি, কারাগারগুলোতে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৩২
ঢাকা: কারাগারে আটক জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে- এমন হুমকি পেয়ে সারাদেশের কারাগারগুলোতে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনকি কারাগারগুলোতে যে কোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলা ও হামলা প্রতিহত করতে জেলারের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কারা অধিদফতর থেকে ১৮ দফা সংবলিত একটি চিঠি কারাগারগুলোতে পাঠানো হয়। চিঠির কোণায় বিষয়টি অতি জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে লালমনিরহাট কারাগারে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো ও মোবাইলে হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে কারাগারগুলোতে ওই নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়।
কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, কারাগার থেকে জঙ্গিদের আদালতে আনা-নেওয়ার সময় রাস্তায় কিংবা কারাভ্যন্তরে অবস্থান করা অবস্থায় যে কোনো সময়ই এসব জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, লালমনিরহাট জেলা কারাগারের বন্দিকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে বলে চিঠিতে হুমকি দেওয়া হয়। কারাগার থেকে বন্দিকে ছিনিয়ে নেওয়া বা কারাবন্দিদের পলায়ন রোধে কারাগারে আটক সব বন্দির ওপর নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেসব কারাগারে, জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিডিআর মামলার আসামি, আইএসসহ বিভিন্ন সংবেদনশীল মামলার আসামি আটক রয়েছে সেসব কারাগারে তাদের চলাচল ও গতিবিধি নজরদারিতে আনতে বলা হয়েছে। এছাড়া তাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কারা অধিদফতরের চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি কিছু দুষ্কৃতকারী কারাগার থেকে বন্দি ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে ও টেলিফোন কলও করেছে। কারাগার একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দুষ্কৃতকারীদের অপতৎপরতা নস্যাৎ করে বন্দি পলায়নসহ যেকোনো দুর্ঘটনা রোধ করতে তৎপর থাকা কারা কর্তৃপক্ষের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রধান ও অন্যতম দায়িত্ব। চিঠিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি কিছু কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শৈথিল্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই সব কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছিদ্র করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
১৮ দফা নির্দেশনায় প্রতিটি কারাগারে জেলারের নেতৃত্বে একজন ডেপুটি জেলার, একজন প্রধান কারারক্ষী ও পাঁচজন কারারক্ষীর নেতৃত্বে সর্বাবস্থায় দায়িত্ব পালনের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এ ফোর্স সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধ বা দাঙ্গা দমনে সব সময় প্রস্তুত থাকবে। তবে পূর্বে যেসব সদস্যদের কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শাস্তি প্রদান করা হয়েছে এমন স্টাফদেরকে এ ফোর্সে না রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া কারা কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কারাগারের আরপি গেটে বাধ্যতামূলকভাবে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টরসহ কঠোরভাবে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা ও প্রয়োজনে অভ্যাগতদের সবার পরিচয় জানতে নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক সশস্ত্র সেন্ট্রির ডিউটির ব্যবস্থা করা, অস্ত্র ও অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রয়োজন হলে অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের মহড়া দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া কারা সীমানায় বহিরাগত যানবাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ করা ও নিষিদ্ধ দ্রব্যের অনুপ্রবেশ রোধ করা, আরপি গেটসহ প্রধান গেটে কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সিসি টিভির মনিটরিং করতে হবে।
চিঠিতে কারাগারের প্যারামিটার ওয়াল ও সীমানা দেয়াল সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি এসব দায়িত্ব পালনের জন্য সকল কারারক্ষীকে ব্যারাকে ও কারা এলাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এছাড়া কারা গোয়েন্দা ইউনিটের সকল সদস্যকে সব সময় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এর বাইরে যেকোনো দুর্ঘটনা রোধ করতে কারাগারের ভেতরে এলার্ম সিস্টেম ব্যবস্থা সচল রাখা ও যেসব কারাগারে জেএমবি ও জঙ্গি আসামি আটক রয়েছে সেসব কারাগার কর্তৃপক্ষকে সব সময় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া কারাগারের যেকোনো প্রকার ঝুঁকি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সঙ্গে অবগত করতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে এসব দায়িত্ব পালনে কোনো কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যূনতম অবহেলা পাওয়া গেলে ও তা প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সর্বাবস্থায় কারাবন্দির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান করা আমাদের নিয়মিত দায়িত্ব। কিন্তু কারা অধিদফতর থেকে কারাগারের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য দেশের সব কারাগারের মতো আমরাও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। কারা সীমানায় আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কোনো বহিরাগতকে ও বাইরের কোনো পরিবহনকে কারা সীমানায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গেটের বাইরে ও ভেতরে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সব কর্মকাণ্ড নজরদারি করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি দুষ্কৃতকারীদের পক্ষ থেকে কারাগারের ভেতর থেকে যেকোনো জঙ্গি ছিনতাই করা হবে- এমন একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ও মোবাইল ফোনে হুমকির ঘটনায় সরকার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশের সব কারাগারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। কারাগারের যেকোনো দুর্ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ করতে প্রতিটি কারাগারে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করেছি। এছাড়া র্যাব-পুলিশসহ সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যে কোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’