‘অনিয়মে ছাড় নেই, বিলবোর্ড অপসারণ কার্যক্রম তার একটি উদাহারণ’
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৩৫
ঢাকা: অনিয়ম করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, কেউ যদি মনে করেন অনিয়ম করে পার পাবেন, তা ভুল। চলমান বিলবোর্ড অভিযানের মাধ্যমে বুঝে নেন অনিয়মে কোনো ছাড় নয়, এটাই তার উদাহরণ।
শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বনানীতে অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে, সকাল দশটা থেকে ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীরের নেতৃত্বে শুরু হয় বনানীর ১১ নম্বর সড়কে অবৈধ বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, শপসাইন, প্রজেক্ট সাইন ইত্যাদি উচ্ছেদ অভিযান। সকাল সাড়ে দশটার দিকে মেয়র হঠাৎ এ অভিযানে যোগ দেন।
অভিযানে এসে মেয়র দেখতে পান বনানী ক্লিনিক ও ফারইস্ট ইউনিভার্সিটি নামের দু’টি প্রতিষ্ঠান সড়কের দুপাশজুড়ে বিশাল সাইনবোর্ড স্থাপন করেছেন। কিন্তু সেসবের কোনো অনুমোদন নেই। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা দেখছেন একটি ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত কোনো বৈধ সাইনবোর্ড স্থাপন করেনি। তো তারাই যদি এমন অনিয়ম করে তাহলে তাদের শিক্ষার্থীদের কি শেখাবে তারা? এটা সত্যি ভীষণ খারাপ লাগছে। যারা নিয়ম মানার কথা তারাই মানছে না।’
এ সময় মেয়র নিজে উপস্থিত থেকে ক্লিনিক ও ইউনিভার্সিটির অবৈধ সাইনবোর্ধ অপসারণ করেন। পরে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন যেন কাউকে এমন অনিয়মে ছাড় না দেয়া হয়।
অনিয়মকারীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন তারা অনিয়ম করলেও আমরা (করপোরেশন) তা দেখতে পাই না। তারা মনে করেন তারা যে অনিয়ম করছেন সেটির কোনো শাস্তি নেই। তাই অনিয়ম করে পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই আজকেসহ গত কয়েকদিন ধরে যেসব বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড অপসারণ করছি। সেসব সাইনবোর্ড যারা লাগিয়েছে তারাও ভেবেছিল পার পেয়ে যাবে। কিন্তু সে সুযোগ নেই। আজ হোক কাল। হয়তো দুই দিন আগে বা পরে অবশ্যই অনিয়মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের এ উচ্ছেদ অভিযান তার একটি উদাহরণ। এখনও সময় আছে যারা অনিয়ম করছেন নিয়মের মধ্যে শহরে কাজ করুন।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘যা কিছুই করেন না কেন, সিটি করপোরেশনের পারমিশন নিতে হবে। সবকিছুরই আইন আছে, নীতিমালা আছে। কিন্তু আমরা দেখছি কেউ কোন ধরনের আইনকে, নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে, যে যার মত সাইনবোর্ড, শপ সাইন, এলইডি সাইন লাগাচ্ছেন। অভিযানের সময় সবাই বলে, আমরা জানি না। কিন্তু আপনি যখন ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন, সেখানে সাইনবোর্ডের মাপও উল্লেখ করা হয়েছে। ৩ ফুট বাই ৪ ফুট সাইনবোর্ডের অনুমোদন নিয়ে যদি ৩০ ফুট বাই ৪০ ফুট সাইনবোর্ড তৈরি করেন, সেখানে যদি এলইডি লাইট লাগানো হয়, সেটা অবৈধ। এভাবে আইন অমান্য করে ঢাকা শহরে আপনারা ব্যবসা করতে পারবেন না।’
মেয়র আরও বলেন, ‘অভিযান চলাকালে অনেকেই আমাকে ফোন করে অনুরোধ করছেন, অনেকে সময় চাইছেন। কেউ বলছেন আমার সাইনবোর্ডটা ভাঙবেন না। কেউ কেউ আমাকে বলছে আপনি তো ফোন রিসিভ করেন না, আমি সবাইকে বলতে চাই। যখন মোবাইল কোর্ট চলবে, উচ্ছেদ চলবে, আমাকে কেউ ফোন করবেন না। ফোন করলেও আমি ধরব না। আমরা এখন গুলশান, বনানী, প্রগতি সরণিতে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। আগামী মাসে ডিএনসিসির অন্য এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ এভাবে পর্যায়ক্রমে ডিএনসিসির সকল এলাকায় অবৈধ সাইনবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান মেয়র।
উল্লেখ্য, অঞ্চল-৭ এর আঞ্চলিক নিবার্হী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদের নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় প্রায় পঞ্চাশটি অবৈধ বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড ইত্যাদি উচ্ছেদ করা হয়। পরে এই সকল বিলবোর্ড সাইনবোর্ড ৪০ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রয় করা হয়। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকী, জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুনসহ অন্যরা।