Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলার ‘সুবর্ণজয়ন্তী’


১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:৫৫

শুধুমাত্র স্মরণে রাখার প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে তথ্য ধরে রাখার পদ্ধতি বা তথ্য মনে রাখার ক্ষমতাকে স্মৃতি বলে অভিহিত করা হয়। সঙ্গে যদি পেরিয়ে আসা সময়ের গড়ে দেওয়া ‘বর্তমান’ যুক্ত হয়, তাহলে তা পরিণত হয় ‘Golden time’ বা সুবর্ণ সময়ে।

ইচ্ছে থেকে লালিত শখও যে স্বপ্ন এবং লক্ষ্যে পরিণত হয়, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ রং-তুলি আর পেন্সিলের আঁচড়। বাধা-বিপত্তিকে তোয়াক্কা না করে এই আঁচড় দিতে সাহস রাখা প্রকৃত প্রেমিক-প্রেমিকারাই প্রবেশাধিকার পায়। যাদের একমাত্র গন্তব্যস্থল, প্রার্থনা আর অধ্যবসায় — ‘চারুকলা’।

বিজ্ঞাপন

চারুকলা শুধু একটি বিভাগের নাম নয়, এটি একটি পরিবার। আত্মার আত্মীয়তার বন্ধনে ওতোপ্রোতভাবে মিশে থাকে পরিবারের প্রতিটি সদস্য। হাসি, আনন্দ, ভালোবাসা, আবেগের পেলবতা এখানে স্থান করে নেয় গভীরভাবে, টেনে নেয় বুকে। ঠিক তেমনিভাবে যেকোন বিপদ বা অভাবে এগিয়ে এসে, নিবিড় ছায়ায় আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায় এই পরিবারের সদস্যগুলো।

একেবারে আনাড়ি শিক্ষার্থীও নিজেকে তৈরি করার প্রয়াসে লেগে পড়ে নিদ্রাহীনভাবে, চেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রয়াসে। এই পরিবারের ‘বাড়ির’ নির্দিষ্ট কোন দরজা নেই। ছয় বা সাতটি জল রং বা পেন্সিলের আঁচড়ে এখানে সকাল শুরু হয়, সবচেয়ে বড় সদস্যটিও এই প্রচেষ্টার সামিল হন। হাতে ধরিয়ে শেখানো ও বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলতে থাকে।

এভাবে আঙিনায় রোদ আসে, আলোকিত আর মুখরিত হয় এই পরিবারের আঙিনা তথা চারুকলা ক্যাম্পাস। ক্লাস করা আর ক্লাস ফাঁকি দেয়ার খেলায় মেহেদী ভাইয়ের ক্যান্টিন চত্বরে চা-সিংগারা আর সঙ্গে আড্ডা কাজের প্রাণচঞ্চলতা তৈরি করে। চাচার হাতের বানানো লেবু দিয়ে লাল চা থেকে শুরু করে, ঝালমুড়িওয়ালা মামা আর এলেবেলে’র প্রাণপ্রাচুর্য পূর্ণ করে আড্ডা।

বিজ্ঞাপন

একান্তই ক্লাস করার অনিচ্ছা থাকা শিক্ষার্থীও দিনশেষে নিজের কাজে মনোনিবেশ করে। অস্বচ্ছল বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সকাল-সন্ধ্যা টিউশন, কোচিং করে ঠিক রাত জেগে হলেও কাজ করে, কাজ শেষ করে। নির্দিষ্ট কোন বাধ্যবাধকতা এই কাজ করার ব্যাপারে তাড়না দেয় না। একমাত্র ভীষণ ভালোবাসা আর ভালোলাগার জায়গা থেকে কাজ এগিয়ে যায় সকল ক্লান্তিকে পেছনে ফেলে। এই তাড়নার পেছনে নিবিড়ভাবে কাজ করেন চারুকলার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা। অধ্যবসায় এবং নিয়মিত চর্চার দুর্বল জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করে, কী করে সেই দুর্বলতাকে পেছনে ফেলে আরও কঠিনভাবে সামনে আগানো যায়, তার পথনির্দেশনা দেন আলোকবর্তিকা হিসেবে। বয়সে ছোট বা বড় ব্যাপার নয়, সাহসের সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়া এবং কাজ করাই চারুকলা অধ্যয়নের  অন্যতম একটি উপজীব্য।

আজ (১৯ সেপ্টেম্বর) প্রাণ প্রিয় ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী।  ১৯৬৯ সালে, শিল্পী রশিদ চৌধুরীর উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধীনে ‘সহায়ক’ বিষয় হিসেবে শিল্পকলা বিষয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বাংলা বিভাগের একটিমাত্র কক্ষ নিয়ে চারুকলার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। একই বছরের ১৭ই আগস্ট কলা অনুষদের সিন্ডিকেট সভায় চারুকলা অনুষদ স্বতন্ত্রভাবে গঠনের প্রস্তাবনা প্রদান করা হয় এবং ১৮ই আগস্ট একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, শিল্পী রশিদ চৌধুরীকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে এই বিভাগ স্বতন্ত্রভাবে চালু হয়। শুরুতে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ড. আবদুল করিম ভবনে  বিভাগের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হত। সেইসময় শিক্ষক হিসাবে আরও ছিলেন জনাব জিয়া হায়দার ও জনাব মিজানুর রহিম। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চারুকলা বিভাগে প্রাথমিকভাবে এম, এ (প্রিলি) কোর্স চালু ছিল। ১৯৭৩-৭৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সম্মান কোর্স শুরু হয়।

১৯৭৫ সালে বিভাগীয় প্রধান রশিদ চৌধুরী চারুকলা বিভাগকে ইনস্টিটিউট করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু নানা কারণে এই চেষ্টা দীর্ঘায়িত হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ২ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষামন্ত্রী চারুকলা হস্তান্তর করেন রেজিস্ট্রারের অধীনে (২-৯ আগস্ট দায়িত্ব পালন) এবং ৯ আগস্ট পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। একই বছরের ১৮ই আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। ২০১১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছয় জন শিক্ষক বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হয়েছেন— রশিদ চৌধুরী (একুশে পদক), মুর্তজা বশির (স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক), দেবদাস চক্রবর্তী (একুশে পদক), জিয়া হায়দার (একুশে পদক), মনসুর উল করিম (একুশে পদক) এবং সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ (একুশে পদক)।

পঞ্চাশ পেরিয়ে আজ ৫১ তে পদার্পণ করছে প্রিয় চারুকলা বিভাগ। সীমা-পরিসীমার গন্ডি পেরিয়ে বিস্তৃত হোক এই ক্যাম্পাসের পথচলা। রঙের আভায় রঙিন হোক চারদিক। আলোকিত হোক ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রাচুর্যে পূর্ণ সকল শিক্ষার্থী। আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে থাকুক শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা।

তথ্যসূত্র:

কোট-আনকোট- অধ্যাপক ড. ফয়েজুল আজিম

চারুকলা বিভাগের পথচলার ৪০ বছর- মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন

ছবি: মো. আতিকুর রহমান রোমান

লেখক— শিক্ষার্থী, শিল্প ইতিহাস বিভাগ, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সুবর্ণজয়ন্তী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর