Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রায় জালিয়াতি: ২ পুলিশ সদস্যসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ


২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৮:৩৭

ঢাকা: ধর্ষণের মামলায় ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় জালিয়াতি করে জাল নথি দাখিল করায় পুলিশের দুই কনস্টেবলসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

এর আগে, মামলার আসামি কবির বিশ্বাসের করা আপিল ও জামিন আবেদনের সঙ্গে ওই রায়ের অনুলিপিতে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ওই মামলায় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও, জালিয়াতির মাধ্যমে সাত বছরের কারাদণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

এদিকে, হাইকোর্টে বেঞ্চ জালিয়াতির মাধ্যমে রায় পরিবর্তন করায় কনস্টেবল বিশ্বজিৎ, কনস্টেবল খায়রুল আলম, তদবিরকারক চাঁন্দ আলী বিশ্বাস এবং ওকালতনামা দেওয়া কাদের আলীর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে।

পাশাপাশি, আসামিপক্ষের আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমানকে মামলার তদন্তে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও, মামলার তদন্তে যদি অন্য কারো সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায় তবে তাকেও আসামি করা যাবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা যায়, মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে কবির বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯(১) ধারায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর মামলা করেন বেলায়েত হোসেন। এ মামলায় তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিলের পর বিচার শেষে ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালের ৮ জুলাই রায় দেন। রায়ে একমাত্র আসামি কবির বিশ্বাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা করেন। ওই সময় আসামির বয়স ছিল ৩২।

ওই রায়ের পর কারাবন্দি কবির বিশ্বাস হাইকোর্টে আপিল করেন। আদালত তার আপিল গ্রহণ করেন। তখন তারপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট হেলালউদ্দিন মোল্লা। যা বিচারাধীন রয়েছে।

এ অবস্থায় কারাবন্দি কবির হোসেনের পক্ষে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে নতুন করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল করেন। এবার আইনজীবী হিসেবে আপিলটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান।

ওই আপিলের সঙ্গে নিম্ন আদালতের রায়ের যে কপি দাখিল করা হয় তাতে দেখা যায়, ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক হিসেবে জেলা ও দায়রা জজ আবু আহসান হাবীব ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর এক রায়ে কবির বিশ্বাসকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং আরো তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

রায়ে বলা হয়েছে, কবির বিশ্বাসের বয়স ৬৫ বছর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হলেও বয়স বিবেচনায় তাকে সাজা কমিয়ে ৭ বছর দেওয়া হলো। এই আপিলের পর আদালত গত ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল গ্রহণ করেন।

তবে, আসামির সাজা কেন বাড়ানো হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। অভিযোগ প্রমানের পরও কেন সাজা কম দেওয়া হয়েছে তার লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বিচারক আবু আহসান হাবীবকে নির্দেশ দেন।

পরে, শুনানিতে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী সাংবাদিকদের জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর আদেশের সময় আদালতের প্রশ্ন ছিল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগ প্রমানের পর আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা না দিয়ে সাজা কম দেওয়ার সুযোগ আছে কি না? জবাবে বলেছিলাম, সে সুযোগ নেই। আইনে অভিযোগ প্রমানিত হলে তাকে যাবজ্জীবন সাজা দিতে হবে। অভিযোগ প্রমানিত না হলে খালাস দিতে হবে।

পরবর্তীতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী ওই মামলার সব নথি জোগাড় করে জালিয়াতির বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এ অবস্থায় আদালত আজ সব নথি দেখে এই নতুন আদেশ দেন।

ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড রায় জালিয়াতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর