সারাবাংলায় সংবাদ: গণগ্রন্থাগারের ভবন নির্মাণ প্রকল্প প্রত্যাহার
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৪৬
ঢাকা: সারাবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য এনইসি/একনেক সমন্বয় অনুবিভাগে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু গত ১৪ সেপ্টেম্বর ‘বিল্ডিং দেখতে বিদেশ যাবেন ৩০ কর্মকর্তা, খরচ ২ কোটি টাকা’ শিরোনামে সারাবাংলা ডটনেটে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি প্রত্যাহার করে নেয় পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ। গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয় এনইসি/একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগে। আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সেই চিঠি সারাবাংলার হাতে এসেছে।
আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান মিতু মরিয়মের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, একনেকে উপস্থাপনের জন্য গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির অত্যাবশ্যক পুনর্গঠনের নিমিত্তে ফেরত পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আমার নজরে আসে। তার আগে আমিসহ আমার কর্মকর্তাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল বিষয়টি। এখন প্রকল্পটি আবারও সংশোধন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ফেরত পাঠানো হয়েছে। এজন্য সারাবাংলাকে অনেক ধন্যবাদ।’
আরও পড়ুন: বিল্ডিং দেখতে বিদেশ যাবেন ৩০ কর্মকর্তা, খরচ ২ কোটি টাকা!
সূত্র জানায়, ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটিতে ৩০ জন কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি টাকা। এ হিসেবে প্রত্যেক কর্মকর্তার পেছনে যেত ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা করে। তবে প্রস্তাব ছিল আরও বেশি। পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতিতেই এই বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে পরামর্শক খাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বড় অংকের টাকা। এক্ষেত্রে ৯৭৩ জনের জন্য ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি মূল্যায়নে কোভিড-১৯’র প্রভাব বিবেচিত হয়নি। কেননা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন। একনেকের যেকোনো বৈঠকে এটি অনুমোদনের জন্য তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় বহুবিধ সুবিধা সম্বলিত আধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে অবকাঠামোগতভাবে গণগ্রস্থাগার অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে। এছাড়া অবকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সুবিধাদি বাড়ানোর মাধ্যমে পাঠক, গবেষক, তথ্য সংগ্রহকারী ব্যক্তিসহ সর্বসাধারণের কাছে গণগ্রন্থাগারের ভূমিকাকে আরও আকর্ষণীয় ও কার্যোপযোগী করে তোলা হবে। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মতে জাতীয় গণগ্রন্থকেন্দ্রের সব জনবল ও কার্যক্রমকে এক ভবনে সংস্থাপনসহ দেশের সব সরকারি গণগ্রন্থাগারের যাবতীয় কর্মকাণ্ড কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গণগ্রন্থাগার অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদফতর।
একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্প-সারসংক্ষেপে প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩০ জন কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বৈদেশিক ভ্রমণ ব্যয় ২ কোটি টাকার মধ্যে সংস্থান রাখতে হবে। এছাড়া ৯৭৩ জন পরামর্শকে জন্য চাওয়া হয়েছে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ বিষয়ে পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পরামর্শক খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে হ্রাস করতে হবে। একান্ত প্রয়োজনে প্রাথমিক পর্যায়ে বিদেশি পরামর্শক প্রয়োজন হলে সে হিসেবে জনমাস কমানোসহ ব্যয় কমাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, পরামর্শক খাতে প্রাথমিকভাবে বিদেশি পরামর্শকের সম্মানি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নির্মাণ কাজ যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য স্থাপত্য ডিজাইন ও স্ট্রাকচারাল ডিজাইন প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া নির্মাণ কাজ চলাকালে তা নিয়মিত পরিদর্শন, মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্লাম্বিং ও ল্যান্ড স্কেপিং ডিজাইনসহ পরামর্শকের কাজের পরিধি এবং গুরুত্ব বেশি থাকবে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে এ খাতে ব্যয় যৌক্তিভাবে কমানো হয়েছে। অর্থাৎ ২৮ কোটি ২২ লাখ ২৪ হাজার টাকা স্থলে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো ছিল- রাজধানীতে ১০তলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ। এছাড়া দুটি বেজমেন্ট ও ৯তলা বিশিষ্ট অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, দুটি জিপ, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ এবং একটি মিনিবাস ক্রয়। এর বাইরে ছিল পরামর্শক, বই ও সাময়িকী ক্রয়, অফিস ভাড়া, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং অফিস সরঞ্জাম সংগ্রহ।
গণগ্রন্থাগার প্রকল্প প্রত্যাহার ভবন নির্মাণ সংবাদ সারাবাংলায়