সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র, মামলা দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিনব কৌশল
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:৫১
ঢাকা: সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। যাদের কাজ সমাজের বিত্তশালীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে অপদস্থ করা। একইসঙ্গে মামলা দিয়ে বিত্তশালীদের সাথে দেখা করে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া। আর এভাবেই প্রতারক চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এমনকি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ যখন সবকিছু মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয় ঠিক তখনই পুলিশের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে মামলা।
এমনই ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেতে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন ফাস্ট ফাইনান্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো তুহিন রেজা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ শুভাঢ্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. ইকবাল হোসেন।
ফাস্ট ফাইনান্স এর এমডির দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৩০ জুন তাকেসহ কয়েকজনকে আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি গণধর্ষণের মামলা করা হয়।
তার প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, যেদিন ধর্ষণের কথা বলা হয়েছে তিনি সেদিন কারওয়ানবাজার অফিসে কর্মরত ছিলেন। এমনকি মিথ্যা মামলা দায়েরকারী ওই নারী তদন্ত অফিসারকে লিখিতভাবে জানায়, মামলাকারী আমাকে চেনেন না। একইসঙ্গে নারী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে এ ঘটনায় আলমগীর সেলিম নামে একজনের সম্পৃক্তকার কথা স্বীকার করে। তবে এখানেই প্রতারক চক্রটি থেমে থাকেনি তারা এই ঘটনার দুই মাস পরে আবার বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, তিন পুলিশ কর্মকর্তা, তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে অপহরণ ও হয়রানি মামলা দায়ের করে। একইসঙ্গে বিভিন্ন লোক মারফতে সমঝোতা করতে আলমগীর সেলিম প্রস্তাব দিচ্ছেন।
অপরদিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ শুভাঢ্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, আমার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র অপরাধমূলক কাজ করে আসছেন। তারা সাধারণ মানুষকে ব্লাকমেইল, ভুয়া মামলা, চাঁদাবাজি ও সাংবাদিকও পুলিশদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে আসছে। এসব ঘটনায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে গেলে তারাও প্রতারণার স্বীকার হন।
চেয়ারম্যান আরও লেখেন, ‘তখন আমি অপরাধ চক্রের মাহমুদা নামক এক নারীকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার কার্যালয়ে ডাকেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ওই নারী তার সব অপকর্মের কথা অকপটে স্বীকার করেন। এ সময় হয়রানিমূলক মামলা দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সহযোগীদের কথা স্বীকার করেন। এরপর পুলিশ অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে আমাকেসহ তিনজন পুলিশ, একজন শীর্য ব্যবসায়ী ও তৈল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই প্রতারক চক্র আবার আজকেও একটি সাইবার ক্রাইম অপরাধে মামলা দায়ের করেছে। আগে এরা যে অভিযোগটি দিয়েছে সেটি থানা তদন্ত করছে। আমরা দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
দুদক সচিব দিলোয়ার বখত সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুদকের বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ আসে। এরপর কমিশন সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখে অনুসন্ধান যোগ্য কিনা। আর অনুসন্ধান যোগ্য হলে অনুসন্ধান করা হয়। আমি যেহেতু অভিযোগের বিষয়টি সম্পর্কে জানি না তাই খোঁজ নিয়ে দেখব।’
এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী আইনুন নাহার সিদ্দিকা সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেউ যদি কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে তাহলে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সবোর্চ্চ ৭ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে যারা মিথ্যা মামলা করছে এমন প্রমাণিত হলে তাদের সাজা হলে মিথ্যা মামলা কমে যাবে। আমি মনে করি, যারা মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছে এমনটা প্রমাণিত হলে তাদের সাজা হওয়া উচিত।’