Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমেরিকা-চীন-ভারতকে সামলে কূটনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করতে হবে’


২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:১৫

ঢাকা: দক্ষতার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারলে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল থেকে বাংলাদেশও সুফল ঘরে তুলতে পারবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দেশ। বাংলাদেশকে এই তিন দেশকেই ‘ম্যানেজ’ করে কূটনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করতে হবে।

বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানীর সঞ্চালনায় ‘সারাবাংলা ফোকাসে’র এ পর্বের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং বাংলাদেশ’। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া।

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, ২০১৮ সালে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে সবাইকে বেনিফিট করার কথা বলা হয়। এর আগে ২০০৬ ২০০৭ সালে জাপান ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনা তুলেছিল। তবে তখনকার যে ধারণা, তার সঙ্গে এখনকার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মিল নেই। আর আমরা যখন ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনা করেছি, তখন হয়তো এটাকে তেমনভাবে দেখা হয়নি। এটার একটা ব্যবসায়িক দিক আছে, আমরা ওইখানে থাকতে চেয়েছি।

সাবেক এই সচিব আরও বলেন, আমাদের কূটনীতি নিয়ে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। গত সাত-আট বছর আমাদের কূটনীতিবিদরা দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। এছাড়া চীন এখন আমাদের বলে ‘বে অব বেঙ্গলের গুরুত্বপূর্ণ দেশ’। তাই নিজেদের দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। আমাদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদুল আনাম খান বলেন, ২০১২ সালে বারাক ওবামা (সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট) যখন ভারত সফরে আসেন, তখন ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনা হয়। ২০১৩-১৪ সালে এটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। ইন্দো-প্যাসিফিকের বিস্তৃতি বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে করে। এশিয়া-প্যাসিফিকের জায়গায় এখন ইন্দো-প্যাসিফিক আলোচনায় চলে আসছে। ভবিষ্যতে বিশ্বনেতৃত্ব পশ্চিমা থেকে এশিয়াতে চলে আসবে।

তিনি বলেন, গত বছরের জুন পর্যন্ত আমাদের তেমন কোনো ধারণা ছিল না যে এটা কী। তবে ধীরে ধীরে সেই ধারণা স্পষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ইন্দো-প্যাসিফিক কোনো একক নেতৃত্ব নয়, এখানে অনেক দেশ আছে। আমেরিকা, চীন ও ভারত— এরা হলো ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রধান শক্তি।

শাহেদুল আনাম খান আরও বলেন, আমেরিকার যে পলিসি, সেখানে চীন হলো প্রথম ফ্যাক্ট। আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়াতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে তারা বাংলাদেশকে তাদের বলয়ের মধ্যে রাখতে চায়। কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিকের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো আমাদের জানতে হবে। চীনের পলিসি নিয়ে আমেরিকা সন্দিহান। আবার আমেরিকার হাবভাব নিয়ে সন্দিহান চীন। একইসঙ্গে চীনের ইকোনোমিক মিলিটারি নিয়ে আমেরিকার সন্দেহ আছে। এসব বিষয়ে পূর্ণ ধারণা রাখতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক বাংলাদেশের জন্য একটি জটিল সমস্যা। আর এই ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশের অবস্থানও বেশ জটিল। বঙ্গোপসাগরে ভারতের অবস্থান বেশ শক্ত। মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারত হচ্ছে লিড সিকিউরিটি প্রোভাইডার। বঙ্গোপসাগরে ভারতের নেভাল বিজনেস খুব ভালো। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে আবার চীনের ভালো সম্পর্ক। এখানে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এরা একদিকে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কথা বলছে, অন্যদিকে চীনকে নিয়ে তাদের আপত্তি আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, আসলে এই ইন্দো-প্যাসিফিকে শত্রু-মিত্র বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তবে বাংলাদেশকে তিনটি শক্তিশালী দেশ— আমেরিকা, চীন ও ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি সমন্বয় করতে হবে। মানে সবাইকে বাংলাদেশের ম্যানেজ করতে হবে। আর এটা করতে গেলে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। এভাবেই শক্তিশালী তিনটি দেশকে ম্যানেজ করে বাংলাদেশকে তার স্বার্থ উদ্ধার করতে হবে।

ইন্দো-প্যাসিফিক ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল কূটনীতি কূটনৈতিক সম্পর্ক ঢাবি অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক সারাবাংলা ফোকাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর