‘উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে’
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:০৮
ঢাকা: দেশের এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, করোনার প্রভাবে এসএমইখাতে উৎপাদন ও বিপণন সবেচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখাতের হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তাই আমাদের অর্থনীতি ও শ্রম বাজারের অভিঘাত মোকাবিলায় শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও পরিবারের সুরক্ষা এবং উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ফ্রাইডরিচ-ইবার্ট-স্টিফটাং এর বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস আয়োজিত ‘করোনা মহামারী ও এসএমই : অভিঘাত প্রশমন নীতিমালা এবং ভবিষ্যত বিতর্ক-বাংলাদেশে প্রভাব এবং বিশ্বের প্রতিক্রিয়া থেকে শিক্ষা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে তিনি এ আহ্বান জানান।
এসএমই ফাউন্ডেশনে চেয়ারপারসন ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম এবং ফ্রাইডরিচ-ইবার্ট-স্টিফটাংয়ের বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ টিনা ব্লম। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনানারি প্রফেসর ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, চিটাগাং উইম্যান চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মনোয়ারা হাকিম আলী, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্নাসহ দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা, এসএমই বিশেষজ্ঞ, বরেণ্য অর্থনীতিবিদরা অনলাইনে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার ফলে এসএমইখাতের অভিঘাত মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এখাতের শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উজ্জীবিত করে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এ প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ধীরে ধীরে এসএমইখাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’
ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীদের মতামত ও অভিজ্ঞতা থেকে এসএমইখাত পুনরুদ্ধারে একটি কার্যকর রোডম্যাপ ও কর্মসূচি প্রণয়ন সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চিত্তাকর্ষক ডিজাইনের পাশাপাশি গুণগতমান ও মূল্যের বিচারে সাশ্রয়ী হওয়ায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এসএমই পণ্য বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা বেশি। বিশেষ করে, বাংলাদেশে এসএমই শিল্পখাতকে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এখাত কর্মসংস্থান, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, নারীর আর্থিক ক্ষমতায়ন এবং রফতানি আয় বাড়াতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।’
ওয়েবিনারে ফ্রাইডরিচ-ইবার্ট-স্টিফটাং বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ টিনা ব্লম বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সারা বিশ্বেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই এই এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যাবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে অর্থনীতিতে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবার আশঙ্কা রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে দৈনন্দিন কাজ ও ব্যবসা পরিচালনার ধরন বদলে যেতে শুরু করেছে।’ করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন ও চাহিদার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন টিনা ব্লম।
ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এসএমই খাতের অর্ধেক শিল্প প্রতিষ্ঠানই দেশের বড় দু’টি শহরে অবস্থিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য এসএমই খাতকে সম্প্রসারিত করার কোনো বিকল্প নেই। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ২৬ শতাংশ এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৪৮ শতাংশ রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি আশাপ্রদ দিক।’ করোনার প্রভাব হতে এসএমই খাত যাতে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য অংশীজনদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়িয়ে উদ্ভাবনী উপায়ে প্রণোদনার প্যাকেজের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন সাবেক গভর্নর।