পদ্মাসেতুর রেললাইন ডিজাইনে ‘ত্রুটি’ সমাধানে কাজ করছেন বিশেষজ্ঞরা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:১১
পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প থেকে ফিরে: পদ্মাসেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পে উচ্চতা ও সড়ক প্রশস্ততা নিয়ে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে, সেটাকে এখনও ‘ত্রুটি’ বলতে রাজি নন রেলপথ বিষয়ক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। জানিয়েছেন, যেটুকু জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা সমাধানে কাজ চলছে। এদিকে, পকিল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও বলেছেন, সামান্য ভুল নিয়ে কান্নাকাটি করার কিছু নেই।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিনভর পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে উচ্চতাজনিত ও সড়কের প্রশস্ততা নিয়ে জটিলতা শনাক্ত হয়েছে, সেটি সরেজমিনে দেখতে যান দুই মন্ত্রী। এই জটিলতা নিয়ে অবশ্য ভিন্নমত জানিয়েছে রেল ও সেতু কর্তৃপক্ষ। পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম মন্ত্রীদের কাছে এর সমাধান চান।
সরেজমিন পরিদর্শন শেষ রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, আদৌও এখানে কোনো ত্রুটি আছে কি নেই, সেটি নির্ধারণ করা হয়নি। পদ্মাসেতুতে ওঠানামার একটি সমন্বয় করা দরকার। তবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোনো ত্রুটি আমরা রাখতে চাই না। আমাদের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী রয়েছে। এখানে বড় ধরনের কোনো ত্রুটি নেই। রেল ও সেতু কতৃপক্ষের কাছ থেকে ডিজাইন নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশল দল কাজ করছে। তারা সব তথ্য বিশ্লেষণ করে মত জানাবে।
রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ত্রুটি ধরা পড়েছে— এটা এখনই বলার সময় আসেনি। রেলের কাজ যেভাবে চলছে, সড়ক ও সেতু কর্তৃপক্ষ তাতে কিছু নতুন কন্ডিশন দিয়েছে। তবে ডিজাইন দেয়নি। এজন্য এক্সপার্ট যারা আছেন, তারা বিষয়টি দেখবেন। কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং ত্রুটি যদি শনাক্ত হয়, তারা সমাধান করতে পারবেন।
রেলপথ বিষয়ক এই মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি উচ্চতা যথেষ্ট আছে। কিন্তু প্রশস্ততার দিক দিয়ে যে ১৫ মিটার ক্লিয়ারেন্স, সেটি একটি সমস্যা। এখন সড়ক ও রেলের কাছে ডিজাইন চাওয়া হয়েছে। ডিজাইন নিয়ে বসে বিশেষজ্ঞ দল একটা মত দেবে।’
তবে সমস্যা যত ছোটই হোক, তা এখনই সমাধান করার পক্ষে মত দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, সামান্য ভুলের জন্য পরে কান্নাকাটি করার মানে হয় না। সময় নিয়ে ব্যয় বাড়িয়েও যদি সমাধান করা যায়, তাহলে সমাধান করতে হবে।
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনী ব্রিগেডিয়ার আহমেদ জামিউল ইসলাম বলেন, সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কনসেপ্টে মতানৈক্যে আছে। কারিগরি দিকটি যৌথ বৈঠক সমাধান করা হবে।
পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেটুকু সমস্যা আমরা পেয়েছি, সেটা নিয়ে আমরা রেলকে চিঠি দিয়েছি, এখন আমরা আলোচনা করছি । এর সমাধান আমরা করব।’
এর আগে সকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও রেলপথ বিষয়ক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রেলরুট ধরে এগিয়ে যান। পরে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে মাওয়া পয়েন্টে যেখানে উচ্চতাজনিত সমস্যা দেখা গেছে, সেই স্থানটি পরিদর্শন করেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে মাওয়া পযন্ত এলিভেটেড রেললাইনের জন্য মোট ১১৮টি স্প্যান বসাতে হবে। এর মধ্যে ১৯টি স্প্যান স্থাপন করা গেছে। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। তবে মূল পদ্মাসেতুর অগ্রগতি অবশ্য প্রায় ৯০ শতাংশ। এরই মধ্যে মূল সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩১টি বসে গেছে। বাকি ১০টি স্প্যান ডিসেম্বরের মধ্যে বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, ছয় কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ পদ্মাসেতুর দুই কিলোমিটার সড়কপথ নির্মাণ শেষ হয়েছে। এই সড়ক শরিয়তপুরের জাজিরা থেকে পদ্মাসেতুর স্প্যানের ওপর দিয়ে নদী পেরিয়ে এখন মুন্সিগঞ্জের দিকে আসছে। ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ করে ডিসেম্বরে সবার জন্য সেতু চালুর লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।