‘বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত’
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:১২
ঢাকা: সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ জাতিসংঘকে যে কোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সুগন্ধা এর নবনির্মিত কমপ্লেক্স উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় ভার্চুয়ালি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন পর্যায় কর্মী বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। আমাদের অসংখ্য সৈনিক নিহতও হয়েছেন। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শুধু এইটুকু বলতে চাই বৈশ্বিক যে কমপ্লেক্স সৃষ্টি হচ্ছে আমরা সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব সময় অটুট থাকব। আমরা চাই সারা বিশ্বে শান্তি থাকুক। আর এই করোনা নামে বর্তমানে যে মহা দুর্যোগ দেখা দিয়েছে করোনার হাত থেকে বিশ্ব মুক্তি পাক। সেটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা এবং আবারো অর্থনৈতিক চাকা সচল হোক সবাই যেন আমরা মানুষ হিসেবে সুন্দর স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারি সেটাই আমরা চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ সময় সাধারণত জাতিসংঘের অধিবেশনে থাকার কথা কিন্তু এবার যেতে পারিনি করোনার কারণে। এটা সত্যি আমাদের জন্য খুব দুঃখজনক। বিশেষ করে আমার জন্য বেশি। আমি ১৬ বার জাতিসংঘের ভাষণ দিয়েছি। এবার আমার ১৭তম ভাষণে আমি যেতে পারছি না। এটি সত্যি খুব দুঃখের। কারণ সেখানে সব দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা হতো অভিজ্ঞতা বিনিময় হতো। তবু আমরা আশা করি এই মহাদুর্যোগ থেকে বিশ্ববাসী রক্ষা পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে আমাদের কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্ব পরিবর্তন হয়েছে। এখন শুধু রাজনৈতিক কূটনীতি নয়। অর্থনৈতিক কূটনীতিও রয়েছে। এখন ডিপ্লোমেসিটা ইকনোমিক ডিপ্লোমেসিতে চলে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো, সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কীভাবে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করা যায়, কীভাবে উন্নয়ন করা যায় এবং একে অপরকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, একে অপরের মাধ্যমে কীভাবে বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায় সেভাবে আমাদের ডিপ্লোমেসি পরিচালনা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। পুষ্টির নিশ্চয়তা ব্যবস্থা করেছি। বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলার জন্য আমরা প্রায় ৩১টি দিক-নির্দেশনা দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছিলাম অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা যে প্রণোদনা দিয়েছি সেটি আমাদের জিডিপির প্রায় চার শতাংশের কাছাকাছি। যার ফলে আমাদের কৃষক, আমাদের শ্রমিক, আমাদের ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, হতে শুরু করে সকলেই এর প্রণোদনা থেকে সুবিধা গ্রহণ করেছে। সেইসঙ্গে একেবারে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার মতো কাজ করে যাচ্ছি এবং একই সঙ্গে আমরা খাদ্যের মজুদের ওপর জোর দিয়েছি। আমরা জানি করোনাভাইরাসের কারণে খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে । বাংলাদেশে যেন কোনোমতেই সে দুর্ভিক্ষের ছোঁয়া না লাগে। এই জন্য আমরা যতটুকু পারি খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য মজুদ করা এবং খাদ্য সরবরাহ করা মত কাজগুলো সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমাদের অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমগুলোও সীমিত আকারে চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এখন লাখ জাতির পিতার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, আমরা সেটি বাস্তবায়ন করব। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষকে আমরা একটি সুন্দর জীবন উপহার দিতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে আমাদের কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্ব পরিবর্তন হয়েছে। এখন শুধু রাজনৈতিক কূটনীতি নয়। অর্থনৈতিক কূটনীতিও রয়েছে। এখন ডিপ্লোমেসিটা ইকনোমিক ডিপ্লোমেসিতে চলে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো, সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কীভাবে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করা যায়, কীভাবে উন্নয়ন করা যায় এবং একে অপরকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, একে অপরের মাধ্যমে কিভাবে বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায় সেভাবে আমাদের ডিপ্লোমেসি পরিচালনা করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে লক্ষে জাতির পিতা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন, এখন আমাদের কাজ হচ্ছে জাতির পিতার সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করা। তিনি হাতে সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। বাঙালি জাতিকে নিয়ে তার একটি স্বপ্ন ছিল। একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল। এ বাংলাদেশের মানুষ ছিল শোষিত-বঞ্চিত নিপীড়িত নির্যাতিত। তাদের বাসস্থান ছিল না, খাবার ছিল না, চিকিৎসা ছিল না, শিক্ষার মতো জ্ঞান অর্জনের সুযোগ ছিল না। সম্পূর্ণ সুযোগবঞ্চিত একটা জাতি। সেই জাতিকেই তিনি দিয়েছিলেন আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, আত্মমর্যাদার নিজেদেরকে গড়ে তোলার সুযোগ। বঞ্চিত মানুষদেরকে বঞ্চনা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই তিনি স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে যেভাবে তিনি গড়ে তুলেছিলেন। আমরা যদি সে সমস্ত ঘটনাগুলো দেখি এবং তা গৃহীত পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা করি আমাদের সত্যিই বিস্মিত হতে হয় যে এত অল্প সময়ে তিনি এত কাজ কীভাবে করে গেলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তি এটাও তার একটি ডিপ্লোমেসি। তার একটি সাফল্য অর্জন। তার এ অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মর্যাদা ক্ষুণ্ন হলো যখন ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট যিনি আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে গেলেন এ মাটিতে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। ১৫ আগস্ট শুধু যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে তা নয়। আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আমার দশ বছরের ছোট ভাইটিকেও তারা ছাড়েনি। শুধু আমরা দুটি বোন আমি ও রেহেনা আমরা বিদেশে ছিলাম। যে কারণে নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। এই কারণে রিফিউজি হিসেবে আমাদেরকে থাকতে হয়েছিল ৬ বছর বিদেশের মাটিতে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন আমার অবর্তমানে আমাকে দলের সভাপতি করল তখন আমি দেশে ফিরে এসেছি। ফিরে এসে আমার একটাই লক্ষ্য ছিল যে কাজ আমার বাবা করতে চেয়েছিলেন তার সেসব কাজ পূরণ করা। অর্থাৎ বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। ২১ বছর পর সুযোগ পেল আওয়ামী লীগ জনগণের স্বপ্ন পূরণের। কারণ পচাত্তরের পর দেশে কার্যত গণতন্ত্র ছিল না, মুখে গণতন্ত্র ছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। এই জাতি যে শোষিত-বঞ্চিত সেই শোষিত-বঞ্চিত থেকে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমরা দেখেছি আমাদেরকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ দেশে ১৬ কোটির উপরে মানুষ। এই ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী নিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হয়। কিন্তু আমাদের তেমন কোনো রিসোর্স নেই। বরং আমাদের যে জনশক্তি জনগণকে আমরা মূল শক্তি হিসেবে দেখি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ সালে জাতির পিতাকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের দোসররা কখনো চায় না এদেশে স্থিতিশীল কোন সরকার থাকুক। যার জন্য মাঝেমাঝে চেষ্টা করে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। এ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে যখন প্রচেষ্টা চালায় তখন আমরা দেখি অগ্নিসংযোগ করে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি আমাদেরকে এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু আমরা এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে পেরেছি একটা কারণে, জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস আমরা অর্জন করতে পেরেছি। আওয়ামী লীগের ওপর এদেশের মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাস আছে যে কারণে তারা বারবার আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আর তাদের কারণে দীর্ঘসময় সরকার পরিচালনায় থাকতে পেরে উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান করতে পেরেছি। যার সুফল দেশের মানুষ ভোগ করছে।’