বাড়ি বাড়ি সেই কুয়ো নেই
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:২৬
ঢাকা: প্রাচীনকাল থেকেই গাজীপুরের ভাওয়াল অঞ্চলে পান করার জন্য সুপেয় পানির অভাব ছিলো ব্যাপক। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় নব্বই (৯০) দশক পর্যন্ত ভাওয়াল অঞ্চলের মানুষ তাদের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করত গভীর কূপ বা কুয়া থেকে। তাই তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছিলো এই কুয়ার স্বচ্ছ পানি। আঞ্চলিক ভাষায় এই কুয়াকে বলা হয় ইন্দারা। এই সুপেয় পানি পানের অভাব বোধ থেকে এই অঞ্চলের মানুষ খনন করতো গভীর কুয়া বা ইন্দারা।খাল-বিল,নদী-নালা, পুকুর থেকে সংগ্রহ করতো ঘর-গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় পানি।
কিন্তু সময়ের আবর্তনে এখন ভাওয়াল অঞ্চলের একমাত্র সুপেয় পানির উৎস কূপ বা কুয়াগুলো হারিয়ে বিলীন গেছে, যা এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আর পাড়ায় পাড়ায় অথবা বাড়ি বাড়ি কুয়া দেখতে পাওয়া যায় না। অথচ কিছুদিন আগেও যেসব পাড়ায় বা বাড়িতে কুয়া ছিল, এখন সেখানে টিউবওয়েল অথবা সাবমার্সিবল পাম্প রয়েছে।
সময়ের আবর্তনে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নব্বই দশক পরবর্তী জেনারেশনের বদৌলতে অর্থনীতির চাকা গতিশীল হওয়ার কারণে স্বস্তি ফিরেছে হয়তবা সুখও বেড়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমীকের একটি অংশ আর দেশব্যাপী শিল্পায়নের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনমানে যে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে তাতে কিন্তু ভাওয়াল অঞ্চল তথা গ্রাম-বাংলার বুক থেকে হারিয়ে গেছে প্রাচীন ঐতিহ্য একমাত্র সুপেয় পানির উৎস কুয়া।
আগে বিকেল বেলা গ্রাম-বাংলার প্রতিটি মা-বোনেরা সন্ধ্যে বেলায় কোমরে কলসি নিয়ে কুয়া থেকে পানি আনত। কালের পরিক্রমায় এখন আর সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায় না। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বর্তমানে মানুষ অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছে। এখন শহরের মতো করে গ্রামাঞ্চলেও বৈদ্যুতিক মেশিনের সাহায্যে মাটির গভীর থেকে পানি তুলা হয়।
এদিকে ভাওয়াল অঞ্চলের কিছু গ্রাম এলাকায় এখনও কুয়ার দেখা পাওয়া যায়। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার কামারগাঁও, জাঁব, ভিকারটেক, আড়াল, সনমানিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে, সদর উপজেলা, শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি, মারতা, কালীগঞ্জ ও কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনও কুয়া দেখতে পাওয়া। কিন্তু সেগুলো এখন পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে আর আগের মতো ব্যবহার হয় না।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে কাপাসিয়া উপজেলার কামারগাঁও গ্রামের মোল্লা পাড়ায় একটি কুয়া দেখা যায়। সেখানে কুয়াটি এখনও অরক্ষিত অবস্থায় আছে, টিউবওয়েল থাকার পাশাপাশি গ্রীষ্মকালে এই কুয়া থেকে পানি তুলে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে শুধুমাত্র পানি পান করা ব্যতিত অন্যান্য সকল কাজে এ পানি ব্যবহার করা হয়। কারণ গ্রীষ্মকালে সাধারণত ভাওয়াল এলাকায় পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি নিচে নেমে যায়।
দেশব্যাপী অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে অনেক বেশি নিচে নেমে গেলে টিউবওয়েল এবং সাবমার্সিবল পাম্প ও পড়ে যায় ঝুঁকির মধ্যে। তাই কালের বিবর্তে হারিয়ে যাওয়া কুয়া হয়ে থাকবে হারিয়ে যাওয়া কালের সাক্ষী।