Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কৃষি সংস্কার বিল: ভারতজুড়ে কৃষক বিক্ষোভ


২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৪৬

ভারতের রাজ্যসভায় পাস হওয়া নতুন কৃষি সংস্কার বিল কৃষকদের স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে, এবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছে দেশটির হাজার হাজার কৃষক। খবর বিবিসি।

শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই কৃষক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে।

এর আগে, ‘কৃষকদের স্বার্থবিরোধী’ কৃষি সংস্কারের দুটি বিল গত ২০ সেপ্টেম্বর বিরোধী সদস্যদের সমালোচনার মুখেও ভারতের বিজেপি-সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যসভায় পাস হয়।

এদিকে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দেশের প্রধান কৃষক সংগঠনগুলোর ডাকে শুক্রবার ভারত বন্‌ধ পালিত হয়। রাজধানী দিল্লি অভিমুখী মহাসড়ক বন্ধ করে দেয় তারা। এছাড়াও, বিভিন্ন রাজ্যে ট্রেন চলাচলও বাধাগ্রস্থ করে তারা।

রাজ্য হিসেবে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, ঊড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের তীব্র বিক্ষোভের ব্যাপারে জানা গেছে। এর মধ্যে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় বিক্ষোভ-বনধ এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে বেশি।

পাঞ্জাব থেকে বিবিসি’র এক সংবাদদাতা জানিয়েছেন, প্রায় সব কৃষক ইউনিয়ন রাজ্যজুড়ে ধর্মঘট ডেকেছে। বিক্ষোভে সমবেত হয়েছে নারী-পুরুষ কৃষকরা। তারা রেললাইনের ওপর অবস্থান নিয়েছে। অধিকারের দাবিতে লড়াই করে যেতে তারা বদ্ধপরিকর।

অন্যদিকে কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, বিহারেও চলছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। অমৃতসর, জালন্ধর, লুধিয়ানা, চণ্ডিগড় সহ বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করেছে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন।

পাঞ্জাবের জালন্ধরের কাছে অমৃতসর-দিল্লি সড়ক অবরোধ করেছে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন ও রেভল্যুশনারি মার্ক্সিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া। ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) শরিক শিরোমণি আকালি দলও (এসডিএ) কৃষি সংস্কার বিলের প্রতিবাদে পাঞ্জাবজুড়ে গণপরিবহন বন্ধের কর্মসূচি নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের পাঞ্জাব ইউনিটের সদস্য হরিন্দর সিং লাখোয়াল বিবিসি হিন্দি’কে বলেছেন, সরকার এই সংস্কার থেকে সরে না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।

হরিয়ানার অম্বালায় বিক্ষোভের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে দিল্লি-চন্ডিগড় বাস সার্ভিস। কিষান মজদুর কমিটি বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকেই পঞ্জাবে ট্রেন চলাচল বন্ধ করেছে। শুক্রবারও তার অন্যথা হয়নি। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেজন্য দিল্লির আশেপাশে বিভিন্ন রাজ্যে প্রচুর পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।

দিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডায়ও চলছে কৃষক বিক্ষোভ। ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন রাস্তা অবরোধ করে বিলের প্রতিবাদ করায় যান চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। মহারাষ্ট্রেও বাম সমর্থিত অল ইন্ডিয়া কিষান সভার ৩০ হাজারেরও বেশি সদস্য রাজ্যের প্রায় ২১টি স্থানে বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে।

পাশাপাশি, কংগ্রেসসহ ভারতের বেশিরভাগ বিরোধী দল কৃষকদের এই বিক্ষোভে সমর্থন দিচ্ছে বলে জানিয়েছে কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা।

এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন বিজেপি বলছে, কৃষি সংস্কার সংক্রান্ত এসব বিলের মাধ্যমে ভারতের কৃষকদেরকে বৃহৎ ক্রেতাদের কাছে সহজে পণ্য বিক্রির সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে।

বিজেপি আরও দাবি করেছে, নতুন এ বিলগুলো আইনে পরিণত হলে সেগুলো মান্ধাতার আমলের আইনের সংস্কারের পাশাপাশি কৃষিপণ্যের ব্যবসা থেকে দালাল ও ফড়িয়াদের উৎখাত করবে। কৃষকদের সুযোগ করে দেবে ওয়ালমার্টের মতো খুচরা বিক্রেতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করার।

লাগাতার এই তুমুল বিক্ষোভের মধ্যেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষি বিলের সমর্থনে কথা বলেছেন। শুক্রবার বিজেপি কর্মীদের আহ্বান করে তিনি বলেন – কৃষকদেরকে কেউ যেনো বিপথে পরিচালিত না করতে পারে সে ব্যাপারে তাদেরকে সজাগ ভূমিকা রাখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তবে, কৃষি সংস্কার বিলের বিরোধীরা বলছেন, বিজেপির আনা সংস্কার বিলগুলোতে কৃষকদের দর কষাকষির সুযোগ সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে খুচরা বিক্রেতারা এখন কৃষকদের উপর বেশি ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পাবে।

তাছাড়া, বিলে কৃষিপণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে কোনো পর্যায়েই কৃষকদের না রাখায় এর পুরো সুবিধাই পাবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে, বিভিন্ন কৃষক ইউনিয়ন এবং বিরোধীদলগুলো এই বিলকে কৃষকদের স্বার্থবিরোধী হিসাবেই দেখছে।

কৃষক বিক্ষোভ কৃষি বিল কৃষি সংস্কার বিল ভারত ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শিরোমণি আকালি দল (এসএডি)

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর