পাবনা-৪ উপনির্বাচন আজ: স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রস্তুত ইসি

পাবনা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘোরিয়া) আসনের উপনির্বাচন। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই এই উপনির্বাচনে ভোট নেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা আশা করছে, শান্তিপূর্ণভাবে এই নির্বাচনে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির তিন প্রার্থীর মধ্য থেকে এই আসনের জনগণ তাদের কাঙ্ক্ষিত জনপ্রতিনিধিকে বেছে নেবে।

আজ শনিবার শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটানা ভোট নেওয়া হবে এই উপনির্বাচনে। নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে সব ধরনের নির্বাচনি প্রচারণা। শেষ দিনও মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোটের জন্য গিয়েছেন তিন প্রার্থী— পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামান বিশ্বাস (নৌকা), বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব (ধানের শীষ) এবং জাতীয় পার্টির রেজাউল করিম (লাঙ্গল)।

এরই মধ্যে নির্বাচনির এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের রিটানিং অফিসার ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতিও শেষ। শুক্রবার দুপুর ২টার পর থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হতে থাকে ব্যালট বক্সসহ অন্যান্য নির্বাচনি সরঞ্জাম। নিজ নিজ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা এসব সরঞ্জাম বুঝে নেন। আর শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে সব ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপারও পৌঁছে যাবে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে। আর যারা ভোট নেবেন, তাদের জন্য থাকবে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস। একইসঙ্গে ভোটারদের লাইনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে চার স্তুরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সংসদীয় আসনটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন থাকছেন ১১শ পুলিশ সদস্য, ১৫শ ৪৮ জন আনসার সদস্য ও দুই প্লাটুন বিজিবি। ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের একাধিক টিমও থাকবে মাঠে। এই আসনের ১২৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৮টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে যেন কোনো ধরনের সহিংসতা না ঘটে এবং ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে।

ইসি সূত্র জানায়, পাবনা-৪ আসনটি ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া— এই দুই উপজেলা দু’টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ১২৯টি, মোট ভোটার ৩ লাখ ৮১ হাজার ১১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৯৭ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪১৫ জন।

এর আগে গত ২৩ আগস্ট পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী উপনির্বাচনে মনোননয়পত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ২ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হয় ৩ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল দাখিল ছিল ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মনোনয়পত্র বাতিলের আপিল নিষ্পত্তি করা হয় গত ৭ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ৮ সেপ্টেম্বর। এর পর থেকেই তিন প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু মারা যাওয়ায় পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত ২ এপ্রিল তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৪ দফায় অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো সদস্যপদ শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে কোনো দৈব-দুর্বিপাকের কারণে ইসি আরও ৯০ দিনের মধ্যে এই নির্বাচন করতে পারবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবারে সেই পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত যাচ্ছে নির্বাচন।

নির্বাচন কমিশন নুরুজ্জামান বিশ্বাস পাবনা-৪ পাবনা-৪ উপনির্বাচন ভোট সরঞ্জাম ভোটগ্রহণ রিটার্নিং কর্মকর্তা রেজাউল করিম হাবিবুর রহমান হাবিব