এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ‘গণধর্ষণ’
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:১৪
ঢাকা: সিলেটের এমসি কলেজে বেড়ানোর সময় স্বামীকে বেঁধে তার স্ত্রীকে ছাত্রাবাসে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী এই ঘটনায় সম্পৃক্ত বলে ভিকটিমের পরিবার জানিয়েছে। এরইমধ্যে ছয়জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে।
ওই গৃহবধূ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ জানায়, সন্ধ্যায় এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বেড়াতে যায় ওই বধু ও তার স্বামী। রাত ৯ টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী স্বামীকে মারধর করে স্ত্রীকে ছিনিয়ে ছাত্রীনিবাসে চলে যায় বলে অভিযোগ এসেছে। পরে স্বামী পিছু পিছু গেলে তাকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ৫-৬ জন গণধর্ষণ করে বলে পুলিশ জানতে পারে।
মহানগর পুলিশের এডিসি মিডিয়া জ্যোর্তিময় সরকার জানিয়েছেন খবর পেয়ে শাহপরান থানা পুলিশের একটি দল গিয়ে ওই ছাত্রীনিবাস থেকে স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধার করে। পরে ভিকটিম নারীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করেছে। শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সিলেটের শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে অভিযুক্তদের ছবি। এখন পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত কাউকে আটক করা যায়নি। তবে তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগ পাওয়ার পর শুক্রবার মধ্যরাতে ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ কয়েকটি ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে একটি পাইপগান, চারটি রামদা এবং দু’টি লোহার পাইপ রয়েছে।
এসএমপি’র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ‘ওদের যে হোস্টেল আছে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত আছে।’
অভিযুক্তরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান এমসি কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আমরা আসামিদের চিনতে পারি। তাদের ছবি ও বায়োডাটা রুম থেকে এনে পুলিশের কাছে সোপর্দ করি। তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলো বলে আমরা স্বীকার করি।’
এদিকে, কলেজ বন্ধের মধ্যেও যারা ছাত্রাবাসে অবস্থান করছে তাদের ১২টার মধ্যে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ ও ছাত্রাবাস বন্ধ থাকলেও সাইফুর অবৈধভাবে ছাত্রাবাসে অবস্থান করছিলেন। তিনি সহযোগীদের নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস, টিলাগড় ও বালুচর এলাকায় ছিনতাই, অপহরণ ও মাদক ব্যবসা করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে বন্ধ ছাত্রাবাসে নিয়মিত জুয়া ও মাদকের আসর বসাতেন এমন অভিযোগও রয়েছে সাইফুরের বিরুদ্ধে।
শাহপরাণ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’