রোহিঙ্গা ইস্যু: আন্তর্জাতিক মহলকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে অনুরোধ
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:২৪
ঢাকা: রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের তৈরি এবং তাদেরই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে বলে ফের তাগাদা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক মহলকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ৮টায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। করোনা মহামারির কারণে এই প্রথম জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনটি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আরও খবর-
- ‘সব দেশ যেন করোনা ভ্যাকসিন সময়মতো ও একসঙ্গে পায়’
- ‘জাতিসংঘে জাতির পিতার বহুপাক্ষিকতাবাদের ঘোষণা আজও প্রাসঙ্গিক’
- কোভিডে জীবন-জীবিকায় সমান গুরুত্ব— জাতিসংঘে তুলে ধরলেন শেখ হাসিনা
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত মিয়ানমার নাগরিককে আশ্রয় প্রদান করেছে। তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এই সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সবসময় ন্যায়সঙ্গত দাবির পক্ষে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে বাঙালি জাতি অবর্ণনীয় দুর্দশা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হয়েছে। সেই কষ্টকর অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছি।
প্রধানমন্ত্রীর পুরো ভাষণ
করোনাকালে স্বাস্থ্যকর্মীসহ যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে চলেছেন, তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। সাধুবাদ জানান জাতিসংঘ মহাসচিবকে, এই দুর্যোগেও তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগের জন্য। বাংলাদেশ শুরু থেকেই যুদ্ধ বিরতিসহ তার অন্যান্য উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেমন জাতিসংঘ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপের সুযোগ তৈরি করেছিল, তেমনি এই মহামারি আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।’
শান্তি ও নিরাপত্তায় বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ
‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’— বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির এই মূলমন্ত্র উল্লেখ করে বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের উদ্যোগ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। পরমাণু অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী গড়তেও বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে নিয়মিত অবদান রেখে চলেছে। মহামারিকালে অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের মতো বিষয়গুলো বাড়ছে। শান্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা এ বিষয়গুলোর মোকাবিলা করতে পারি।
তিনি বলেন, ‘শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশের অবস্থান এখন শীর্ষে। সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে আমাদের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যতম দায়িত্ব।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “শান্তির প্রতি অবিচল থেকে আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। মহামারির ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও অপরিহার্য। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী বিনির্মাণে বৈশ্বিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থন অবিচল। সে বিবেচনা থেকে পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্যক্রমকে আমরা জোর সমর্থন জানাই।”
আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন রোহিঙ্গা সংকট রোহিঙ্গা সমস্যা