তিস্তা চুক্তি: দিল্লি বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিয়েছে
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:৫৯
ঢাকা: তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল রয়েছে। আর সে কারণে দিল্লি বাংলাদেশকে রীতিমতো চীনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ভারত যদি এই সমস্যা সমাধান করতে পারতো তাহলে বাংলাদেশ চীনমুখী হতো না। বাংলাদেশ হয়তো চীনের মাধ্যমে বড় একটি সমাধান পেতে যাচ্ছে।
শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলার ভার্চুয়াল আলোচনা ফোকাসে ‘তিস্তা চুক্তি হলেও বাংলাদেশ ন্যায্য হিস্যা পাবে কি?’ শীর্ষক বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আলোচকরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অতিথি হিসেবে ছিলেন- সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এম এ কে জিলানী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘শীতে বাংলাদেশের অন্যতম পানি সমস্যার কারণ সিকিমে অনেকগুলো বাঁধ তৈরি করা হয়েছে এবং আরও তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। ফলে তিস্তায় পানি এলে তার গতি থাকে না, এনার্জি থাকে না। কিন্তু ভারত এই বাঁধ ভাঙবে না। কারণ, এখানে আয় রয়েছে। আর বিশ্বব্যাংকের ইনভেস্টও রয়েছে। তাই আমাদের বৃষ্টির সময় পানি আটকে রাখতে হবে। আর শীতের সময় সেই পানি ছেড়ে দিলে যেখানে প্রয়োজন সেখানে ব্যবহার করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি এক সময় তিস্তা চুক্তিতে রাজি হয়েছিল। তখন তিনি একটি ইকোনোমিক প্যাকেজ চেয়েছিলেন। আর সেটা দিয়ে তিনি তার মানুষকে সামাল দিতে চেয়েছিলেন। কিন্ত সেটা হয়নি। আর তিস্তার পানি নামছে সিকিম থেকে। অপরদিকে তিস্তাতে চীন নিজ ইচ্ছায় আসেনি। আর তারা এ বিষয়ে খুব একটা জানেও না। তাই বাংলাদেশের একটি বাঁধ তৈরি করতে হবে, যেখানে বৃষ্টির সময় পানি আটকে রাখা যায়। সেটা চীনের থেকে লোন করে নিয়ে করলেও বাংলাদেশের জন্য ভালো; যার মাধ্যমে বাংলাদেশের একটা সমস্যা সমাধান হবে। ভারত তিস্তা নিয়ে রাজনীতি করল এবং সেখান থেকে তারা সরলো না। তাই বলতে হচ্ছে, দিল্লি বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ভারত যদি সমাধান করতে পারতো, তারা যদি ড্যামগুলো কমিয়ে আনতো পারতো, সিকিমের পাওয়ারগুলো যদি কমিয়ে আনতে পারতো, তাহলে মমতা ব্যানার্জিও এটা নিয়ে খুব একটা কথা বলতেন না। এখন চীনের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়তো বড় একটি সমাধান পাবে।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাঁধ দেওয়ার কারণে তিস্তায় পানি কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। এছাড়া ভারতের পানি বিশেষজ্ঞরা কিন্তু কখনো বলেননি বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি কমে গেছে। বাঁধগুলো বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য, তাই পানির পরিমাণ কমেছে এটা আমি কখনও শুনিনি। তবে ভারত ও বাংলাদেশের যে পরিমাণ পানি দরকার তার থেকে তিস্তায় পানি কম আছে। যা আছে সেটাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভাগাভাগি করতে হবে। যখন বাঁধ ছিল না তখন তিস্তার পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং প্রয়োজন মিটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সবসময় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও গুরুত্ব পায়। দেশের স্বার্থের চেয়ে অনেক সময় মানুষ দলের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বলি হচ্ছে তিস্তা। আমরা তিস্তা চুক্তির অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। আর সেটা নিয়ে দু’দেশের সম্মতিতে খসড়াও হয়েছিল। সেটা হলে দুপক্ষের অন্তত বেঁচে থাকার মতো হতো। গঙ্গাতে যেমন আমরা দু’পক্ষ পানি পাচ্ছি, তেমনি আমরা তিস্তাতেও পেতাম। গঙ্গাও অনেকদিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির শিকার ছিল। এরপর সুবিধাজনক সময়ে গঙ্গা চুক্তি হয়। সবোর্চ্চ পর্যায়ের সম্পর্ক দু’দেশের অফিসিয়াল পর্যায়ে। কিন্তু এজেন্ডা থেকে যে তিস্তা চুক্তি বাদ পড়ে গেছে এটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পছন্দ করছে না। তাই ভারতীয়দের বিষয়টি বোঝা উচিত। বাংলাদেশের মানুষ মোটেও এটাতে পজিটিভ নয়।’
তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘বিজেপির টার্গেট হচ্ছে আগামী নিবার্চনে পশ্চিমবঙ্গ দখল করা। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে তারা ৪০ শতাংশ ভোট দখল করেছে। অন্যদিকে মমতা ব্যানার্জির লক্ষ্য হচ্ছে তার সরকারকে টিকিয়ে রাখা। সব মিলিয়ে তিস্তা নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি তো আছেই।’
অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ চীন ঠেলে দিচ্ছে তিস্তা চুক্তি তৌহিদুল হাসান দিল্লি ফোকাস বাংলাদেশ সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সারাবাংলা ফোকাস