Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রান্স ফ্যাটের উচ্চ ঝুঁকিতে দেশ, আইন প্রণয়নের তাগিদ


২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:৪৫

ঢাকা: ডালডার মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ট্রান্স ফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড), যা মানুষের হৃদরোগের অন্যতম কারণ। দেশে এই ট্রান্স ফ্যাট বিষয়ে কোনো আইন না থাকায় বেকারি পণ্যের মাধ্যমে ট্রান্স ফ্যাট ঢুকছে মানুষের শরীরে। এছাড়া চিপসসহ হোটোলের বারবার জাল দেওয়া তেলে ভাজা খাবার থেকেও ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হচ্ছে। এটি নীরব ঘাতক হিসেবে মানুষের আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত নিরাপদ খাদ্য গ্রহণে আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) শেষ হওয়া দুই দিনের এক কর্মশালায় সংশ্লিষ্টরা এ তাগিদ দেন। প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) এবং গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর যৌথ উদ্যোগে সাংবাদিকদের জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএমএ ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় হৃদ রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং বিএসটিআই সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা অংশ নেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের সঙ্গে হৃদরোগ ঝুঁকির উচ্চহার ব্যাপকভাবে সম্পর্কযুক্ত। পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর একক কারণ হিসেবে হৃদরোগের অবস্থান শীর্ষে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে (মোট মৃত্যুর ৩১ শতাংশ) এবং কেবল ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আড়াই লাখ মানুষ।  এদিকে, বাংলাদেশে প্রতিবছর দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যার ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্স ফ্যাট। উদ্বেগের বিষয়— হৃদরোগীদের করোনা সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেকগুণ বেশি।

কর্মশালায় জানানো হয়, ভেজিটেবল অয়েল বা উদ্ভিজ্জ তেল (পাম, সয়াবিন ইত্যাদি) যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আংশিক হাইড্রোজেনেশন করা হলে তেল তরল অবস্থা থেকে কঠিন আকার ধারণ করে, অর্থাৎ জমে যায়। এই প্রক্রিয়ায় ট্রান্স ফ্যাটও উৎপন্ন হয়। এছাড়া ভাজাপোড়াজাতীয় খাদ্যে একই ভোজ্য তেল উচ্চ তাপমাত্রায় বারবার ব্যবহারের কারণেও খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়। তবে আংশিক হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও) ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস। এই পিএইচও বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে অধিক পরিচিত। ডব্লিওএইচও’র পরামর্শ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম। অর্থাৎ দৈনিক ২০০০ ক্যালোরির ডায়েটে তা হতে হবে ২ দশমিক ২ গ্রামের চেয়েও কম।

বিজ্ঞাপন

বক্তারা বলেন, ট্রান্সফ্যাট এক ধরনের অসম্পৃক্ত চর্বি বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এলডিএল) বাড়িয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল) কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তবাহী ধমনীতে কোলেস্টেরল জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি করে এবং এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ঢাকার পিএইচও নমুনার ৯২ শতাংশে ডব্লিউএইচও’র সুপারিশ করা ২ শতাংশ মাত্রার বিপরীতে প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডগুলোর নমুনা বিশ্লেষণ করে এই ফলাফল পেয়েছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। অন্য একটি গবেষণায় ঢাকার স্থানীয় বাজার থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে সংগৃহীত ১২ ধরনের বেকারি বিস্কুটের নমুনায় ৫ শতাংশ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ট্রান্স ফ্যাটজনিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যেও বাংলাদেশ অন্যতম। অতি সম্প্রতি ডব্লিউএইচও প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

কর্মশালায় বাংলাদেশে হৃদরোগ ঝুঁকি কমিয়ে আনতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডব্লিউএইচও’র পরামর্শ অনুযায়ী সব ধরনের ফ্যাট, তেল ও খাদ্যদ্রব্যে  ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ করে আইন প্রণয়ন এবং কার্যকর করার সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সহায়ক পদক্ষেপ হিসেবে মোড়কজাত খাবারের পুষ্টিতথ্য তালিকায় ট্রান্স ফ্যাটের সীমা এবং উপকরণ তালিকায় পিএইচও’র মাত্রা উল্লেখ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এছাড়া ফ্রন্ট অব প্যাকেজ লেবেলস বাধ্যতামূলক করে সেখানে ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতি নির্দেশক— যেমন— ‘ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত’ বা ‘স্বল্পমাত্রার ট্রান্স ফ্যাট’— এরকম স্বাস্থ্যবার্তা ব্যবহারের বিধান করলে তা সবাইকে সচেতন করতে সহায়তা করবে বলে মত দেন বক্তারা।

এদিকে নিরাপত্তা খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ড.  আব্দুল আলিম জানিয়েছেন, সোমবার বিকেলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরির সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে।

গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর ট্রান্স ফ্যাট ডব্লিউএইচও প্রজ্ঞা হৃদরোগের ঝুঁকি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর