‘চামড়াশিল্পকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার’
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:১৬
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ‘চামড়া শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে চামড়া শিল্পকে অধুনিকায়ন করতে হবে।’
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ‘কোভিড পরবর্তী বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের ভবিষ্য’ শীর্ষক এক সেমিনারে সালমান এফ রহমান এসব কথা বলেন।
রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিকত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন। ইআরএফ-এর সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে রিচার্স অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (রেপিট)-এর চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পকে অনেকটা জোর করে আদালতের নির্দেশে সাভারে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে করে চামড়াশিল্প কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কারণ যখন চামড়া শিল্পকে অপ্রস্তুত অবস্থায় সাভাবের শিল্পনগরী স্থানান্তর করা হয়েছে তখন সেটা ট্যানারি শিল্পের জন্য প্রস্তুত ছিলে না। অপ্রস্তুত অবস্থায় সেখানে ট্যানারিগুলো স্থানান্তর করার কারণে এই শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।‘
তিনি বলেন, ‘সাভারের চামড়াশিল্প নগরী অধুনিকায়ন করতে অবকাঠামোসহ প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। গত মে, জুন ও জুলাই মাসে সিইটিপি থেকে যে পানি নিষ্কাশন হয়েছে সেটার মান ভাল ছিল। কিন্তু গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এসে তা আবার মান খারাপ হয়ে গেছে। মূলত আগস্ট সেপ্টেম্বরে কাজ বেশি হওয়ায় মান খারাপ হয়েছে। পাশাপাশি ট্যানারিগুলো পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।‘
তিনি বলেন, ‘সাভারের চামড়াশিল্প নগরের জন্য প্রথমে ১২৫ কোটি টাকার প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছিল তখন কিন্তু সেখানে সিইপিটির কথা ছিল না। পরে সিইপিটি সংযোজন করার কারণে ১২৫ কোটি টাকার প্রকল্প ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। পরে তা থেকে কিছুটা কমিয়ে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘সলিড বেইজই হলো চামড়া শিল্প নগরীর মূল সমস্যা। হাজারীবাগে থাকাকালীন সময়ে সলিড বেইজ কাঁচামাল হিসাবে ছোট ছোট ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সাভারে চামড়াশিল্প নগরীর চলে যাওয়ার কারণে সলিজ বেইজ সমস্যা বেড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘চামড়াশিল্পকে নিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। চামড়া শিল্পে আমাদের যে কাঁচামাল রযেছে সেটা আমাদের সম্পদ। এই সম্পদ কাজে লাগাতে হবে।‘
তিনি বলেন, ‘চীন একটি বড় মার্কেট, সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া আমাদের জন্য একটা বড় সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। চামড়াজাত পণ্য যে ধরনের ইনটেনসিভ দেওয়া হবে, পাশাপাশি নন লেদার পণ্যেও আমাদের সমান ইনটেনসিভ দেওয়ার কথা ভাবছি। কারণ চামড়াজাত পণ্য ও চামড়াবিহীন পণ্যের প্রযুক্তি প্রায় একই রকম। সারাবিশ্বে ননলেদার পণ্যের চাহিদা বাড়াছে। ফলে সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।‘
বাণিজ্য সচিব ড. মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন বলেন, ‘চামড়াশিল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর রফতানি খাত। এই খাতে প্রত্যেক্ষভাবে ৩ লাখ এবং পরোক্ষভাবে ৬ লাখ লোক নিয়োজিত রয়েছে। ২০২১ সালে চামড়াজাত পণ্য লফতানি আয়ের লক্ষমাত্রা ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
তিনি বলেন, ‘সাভারের চামড়াশিল্পনগরীর সিইপিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পৃন্ন করতে লকডাউনের সময়েও আমরা কাজ করেছি। এ সময়ে বাংলাদেশ ১১ বিলিয়ন ডলার পণ্য রফতানি করেছে।’
ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, ‘চামড়াশিল্প আমাদের নিজস্ব শিল্প, এই শিল্পের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল আমাদের দেশ থেকেই সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু এই শিল্পকে রক্ষা করতে হবে।’