Friday 11 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাবেক শিবির নেতার ঠাঁই বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে, চট্টগ্রামে ক্ষোভ


২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৩৩ | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:২৭
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আশির দশকের ছাত্রশিবিরের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী, বিতর্কিত এক সাবেক নেতার মৃত্যুতে চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিদের শোক প্রকাশ এবং তাকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাবেক ছাত্রনেতা, এমনকি খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শোক বিবৃতি পাঠিয়েও পরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সেটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

চট্টগ্রামের আশির দশকের ছাত্রনেতারা বলছেন, ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়নসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী হত্যায় সাবেক শিবির নেতা হাসান মাহমুদ চৌধুরীর দায় আছে। জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পরে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বনে যাওয়া এই ব্যক্তি ছিলেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ভাবশিষ্য ও ব্যবসায়িক অংশীদার। ঢাকার মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থান থেকে তার লাশ সরানোর দাবিও উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসান মাহমুদ চৌধুরী সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মারা যান। তিনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর ছোট ভাই। এছাড়া চট্টগ্রামের ‘কাশেম-নূর ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের প্রধান। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়। তাকে ঢাকার মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

আঞ্চলিক দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত হাসান মাহমুদের মৃত্যুর সংবাদে উল্লেখ আছে, তার মৃত্যুতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাউজানের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, জামায়াত ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরের আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ সাবেক ছাত্র সমিতির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সভাপতি মনজুরুল আলম মনজু ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানসহ প্রায় অর্ধশত বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা শোক জানিয়েছেন।

শোক ও সহানুভূতি জানানো ব্যক্তিদের অধিকাংশই আওয়ামী ঘরানার হিসেবে পরিচিত। মূলত এই শোক বিবৃতি এবং বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফনের বিষয়টি জানাজানির পর সোমবার রাত থেকেই ফেসবুকে সরব হয়েছেন অনেকে।

সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সোমবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শোক বিবৃতি প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এতে উপমন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রামের ‘কাশেম-নুর ফাউন্ডেশন’-এর প্রধান, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর ভাই, হাসান মাহমুদ চৌধুরীর মৃত্যুতে অনেকের মতো আমিও শোক প্রকাশ করেছি। তার সঙ্গে আমার বিশেষ পরিচয় ছিল না। অস্ট্রেলিয়ায় চট্টগ্রাম সমিতির একটি অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে প্রথম পরিচয়। যতদূর জানি এই ফাউন্ডেশন করোনাকালীন অনুদান দিয়ে সহযোগিতা করেছে চট্টগ্রামে। তাই দানশীল ব্যক্তির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করাই স্বাভাবিক। তবে অতীতে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করেছেন বলে আমাকে জানানো হয়েছে এবং এই অভিযোগও তোলা হয়েছে যে তিনি ছাত্রলীগ নেতা হত্যার মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। আমি সেই সময়ের রাজনীতির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম না। তবে যারা ছিলেন, তারা এই কথা বলেছেন এবং যারা বলেছেন, তারা ত্যাগী রাজনৈতিক কর্মীই ছিলেন। সুতরাং ছাত্রশিবিরের খুনের আর বাংলাদেশ বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির অপরাধ শুধু কিছু টাকা দান করলেই মোচন হয়ে যাবে না। অতীত রাজনৈতিক ও ফৌজদারি অপরাধের (যদি করে থাকে) অনুশোচনা তার ছিল কি না, জানি না। তবে সেই রাজনীতির প্রতি এবং এর ধারককে অবশ্যই ধিক্কার জানাই। বাংলাদেশ বিরোধী রাজনীতি, খুন-হত্যা-রাহাজানির রাজনীতি, স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে হত্যা করার রাজনীতি কখনোই আর্থিক অনুদান দিলেই মোচন হয়ে যাবে না, যেতে পারে না। শিবিরের খুনের রাজনীতি এবং এই রাজনীতিকে যেই ব্যক্তিই ধারণ করেছে, যদি তা সত্য হয়ে থাকে এবং যদি অনুশোচনা না করে থাকেন, তাহলে তার প্রতি সহানুভূতি এবং শোক প্রকাশের কোনো অবকাশ নাই।’

প্রতিবাদে সরব হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাক্ষী সিরু বাঙালি, পঁচাত্তর পরবর্তী ছাত্রলীগ নেতা সফর আলী, জামশেদুল আলম চৌধুরী, মো. আব্দুল মোমিন, আশির দশকের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা একরাম হোসাইন, নব্বইয়ের দশকের ছাত্রলীগ নেতা হাসান মনসুর, সাংবাদিক নেতা হাসান ফেরদৌসসহ আরও অনেকে।

জামশেদুল আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, প্রয়াত হাসান মাহমুদ চৌধুরী সত্তরের দশকেই ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহজালাল হলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময়ে তিনি বিভিন্ন পদে নেতৃত্ব দিয়ে ছাত্রশিবিরের চবি শাখার সভাপতি পর্যন্ত হয়েছিলেন। ১৯৯১ পরবর্তী সময়ে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল পদ পান। ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন মীর কাশেম আলীর ভাবশিষ্য। পরবর্তী সময়ে তার ব্যবসায়িক অংশীদার হয়ে ‘হাজার হাজার’ কোটি টাকার মালিক হন।

‘আমি তাকে রাজাকার-আলবদর বলছি না। কিন্তু সে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার-আলবদরদের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে। জামায়াত-শিবিরের খুন-রগ কাটা, সন্ত্রাসের রাজনীতি মাস্টারমাইন্ড ছিল সে। চট্টগ্রাম শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আশপাশের এলাকায় ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগসহ মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী অসংখ্য নেতাকর্মীকে তার পরিকল্পনায় হত্যা করা হয়েছে। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ছাত্রসমাজের নেতা হামিদের হাতের কব্জি কেটে নিয়েছিল সে। আজ তার টাকা হয়েছে বলে কি অতীত ইতিহাস মুছে যাবে? তার মৃত্যুতে শোক জানানো এবং বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা— এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা ক্ষুব্ধ। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঢাকা উত্তরের মেয়রের কার্যালয়ে ফোন করে আমি প্রতিবাদ করেছি। তার লাশ বাঁশের সঙ্গে বেঁধে কুকুর-বিড়ালকে খাওয়ানোর কথা বলছি না। কিন্তু বুদ্ধিজীবী কবরস্থান থেকে সরানো হোক, এটা আমাদের দাবি,’— বলেন জামশেদুল আলম।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আশির দশকের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা একরাম হোসাইন ফেসবুকে পোস্টে উল্লেখ করেছেন, ‘সে (হাসান মাহমুদ) শাহজালাল হলের ছাত্র ছিল। তার সময়ে বহু সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়ে শিবির ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ করেছে। তার মধ্যে অন্যতম— ১৯৮৬ সালের ২৬ নভেম্বরে শিবিরের রক্তাক্ত অভ্যুত্থান, দিনের দুপুরে এরশাদের জাতীয় ছাত্র সমাজ নেতা হামিদের হাত কব্জি থেকে কেটে নিয়ে উল্লাস, সাথে সাথে হুইশেল বাজিয়ে মোটরসাইকেলযোগে শিবিরের ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ, একই সময়ে সবগুলো হলের একেকটি কক্ষ থেকে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা বাঁশি শুনে হলে হলে অন্য সংগঠনের নেতাদের উপর সংঘবদ্ধ আক্রমণ পরিচালানা করে ক্যাম্পাস দখল করে নেয়। শিবিরের সেই সফল অভিযানের সময় শিবির চবি শাখার সভাপতি ছিল চৌদ্দগ্রামের আমির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নূরানী চেহারার এই আলোচিত হাসান মাহমুদ (স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনের সময়কার এরশাদের দালাল কুখ্যাত জিয়া উদ্দিন বাবলুর ছোট ভাই)।… হাসান মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক থাকাকালেই চবি ক্যাম্পাস পুরোপুরি শিবিরের দখলে চলে যায়। পরে কয়েকবার দখল, পাল্টা দখল হয়েছে। স্বার্থ-সুবিধায় আওয়ামী লীগ এই ইতিহাস মনে রাখবে না।’

মুক্তিযোদ্ধা সত্তরোর্ধ্ব সিরু বাঙালি সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাসান মাহমুদের ভাই জিয়াউদ্দিন বাবলু। তার অনেক বড় বড় জায়গায় হাত আছে। আর হাসান মাহমুদ তার গুরু যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর সঙ্গে মিলে হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়েছে। সেই টাকার ভাগও অনেক বড় বড় জায়গায় গেছে। বিস্তর টাকা সে বিভিন্ন জায়গায় ঢেলেছে। এর প্রমাণ আমরা দেখলাম— মৃত্যুর পরে এই কুখ্যাত লোকের জন্য আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের শোকের বহর। উপমন্ত্রী নওফেল শোক বিবৃতি পাঠিয়েও পরে সেটা প্রত্যাহার করেছে। আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। তাকে আবার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এই বদমায়েশের স্থান যদি বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে হয়, তাহলে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার তো আত্মহত্যা করা উচিত।’

তিনি আর লিখেছেন, ‘এই বাংলাদেশ তো আমরা চাইনি। এই বাংলাদেশ পাবার জন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি। আমাদের বেঁচে থাকার তো আর কোনো সার্থকতা রইল না। সোজাসাপটা একটা কথা বলতে চাই— এই জামায়াত অচিরেই আওয়ামী লীগের জন্য বিষফোঁড়া হবে। এই আপসের রাজনীতির কারণে একদিন আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাবে।’

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম শহরে যারা ছাত্রলীগের হাল ধরেছিলেন, তাদের অন্যতম বর্তমান নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সফর আলী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাসান মাহমুদ শিবিরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ছিল। তার হাত ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির রগ কাটা-হাত কাটার রাজনীতি শুরু হয়েছিল। আমাদের অনেক ছেলের রক্তে তার হাত রঞ্জিত হয়েছে। অথচ তার জন্য আমাদের নেতারা, মন্ত্রী-এমপিরা শোক জানান, এই দুঃখ কেমনে সহ্য করি! টাকা দিয়ে অতীত পরিচয় আড়াল করা যায়? টাকা দিয়ে কি সব কেনা যায়?’

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সফর আলী বলেন, ‘টাকার জন্য যদি মীর কাশেম আলীর সহযোগীর কবর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে হয়, তাহলে একাত্তরে নরহত্যার মাস্টারমাইন্ড গোলাম আজমের লাশ তুলে এনে তাকেও সেখানে সমাহিত করা হোক! গোলাম আজম আর বাদ যাবে কেন!’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা ও বর্তমানে সিপিবির চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাবেক ছাত্রশিবির নেতা হাসান মাহমুদ ছিলেন স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির নেতা। আজীবন এই লোক সেই আদর্শ ধারণ করে গেছেন বলে আমরা জানি। অথচ তার মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা যেভাবে শোক প্রকাশ করলেন, এর মাধ্যমে তারা মুক্তিযুদ্ধকেই অপমান করলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সত্যিকারভাবে ধারণ করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি সম্পর্কে পরিষ্কার অবস্থান থাকতে হবে। এদের ঘৃণা করতে না পারলে বাংলাদেশ এগোতে পারবে না।’

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেওয়া মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘জামায়াত-শিবির সুকৌশলে শুধু সরকারে নয়, তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ও চলে গেছে। তারা এখন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের মতো পবিত্র জায়গায়ও ঢুকে গেছে। আওয়ামী লীগের কিছু নেতা টাকার বিনিময়ে তাদের এই সুযোগ করে দিয়েছে। এর খেসারত অবশ্যই আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। ঘৃণিত ব্যক্তির মৃত্যুতেও উল্লাস করব না— এটা ঠিক আছে। কিন্তু তাকে ফেরেশতা বানিয়ে মহিমা প্রচার করা হবে, এ কেমন কথা! দেশ আজ স্পষ্টত দুই ভাগে বিভক্ত— একদল হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে, আরেকদল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। এই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে কিছু লুটপাটকারী নেতা-জনপ্রতিনিধি। আমরা যারা দুঃসময়ে ছাত্রলীগ করেছি, দলকে লুটপাটের হাতিয়ার বানাইনি, একদিন আমাদের কাছে এই অন্যায়ের জবাব দিতে হবে।’

নব্বইয়ের দশকের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর সহযোগী হিসেবে আমরা চিনতাম হাসান মাহমুদকে। তার মৃত্যুর পর সরকারি দলের কতিপয় নেতা, বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন তাকে দানশীল, সমাজসেবী— এ ধরনের নানা উপাধিতে ভূষিত করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এসব দেখে মনে হচ্ছে, আগামীতে হয়তো গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাশেম আলীদের মরণোত্তর পদক দেওয়া হবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সঙ্গে একজন কুখ্যাত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়েছে। এটা মেনে নিতে পারছেন না আওয়ামী লীগের লোকজনও। আজকাল মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা অনেকে বলেন, অথচ সামান্য ক’টা টাকার জন্য অনেকে নিজেদের বিবেক, বুদ্ধি, সম্মান, আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দেন— এটা ভাবতেও কষ্ট হয়।’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসান মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্রলীগ করেছি, তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। আওয়ামী লীগ আর কোনোদিন ক্ষমতায় আসবে— এটাও আমরা ভাবতামও না। তখন ছিল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত-শিবিরের প্রবল প্রতাপ। আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ ‍মুজিবুর রহমানের আদর্শ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছি। অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আপস করেও রাজনীতি হয়— এটা আমরা কখনোই ভাবতে পারি না। আদর্শের সঙ্গে কখনোই আপস নয়। এই আপস দেখলে আমাদের মতো লাখ লাখ নেতাকর্মীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কুখ্যাত সাবেক শিবির নেতার লাশ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির জিয়াউদ্দিন হাসান বাবলু বুদ্ধিজীবী কবরস্থান মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাবেক শিবির নেতা স্বাধীনতাবিরোধী হত্যার রাজনীতি হাসান মাহমুদ চৌধুরী