কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব, ১৯ হাজার জনবল নিয়োগ শিগগিরই
১ অক্টোবর ২০২০ ১১:০৩
ঢাকা: সাধারণ ধারায় শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতাভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সরকারের চাওয়া, শিক্ষার্থীরা এমনভাবে গড়ে উঠুক যেন তাদের মধ্যে বাস্তব কাজের দক্ষতা তৈরি হয়। আর সে কারণেই কেবল কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাতেই কেবল গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, সাধারণ বিদ্যালয় ও মাদরাসাতেও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটি কারিগরি বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালেই এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৮ সালে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা ছিল শতকরা ১ ভাগেরও কম। সরকারের বহুমাত্রিক উদ্যোগের ফলে এখন সেখানে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা ১৭ দশমিক ১৪ ভাগে উন্নীত হয়েছে। কারিগরি শিক্ষাকে ঘিরে সরকারের লক্ষ্য সফল করতে এই খাতে আরও ১৯ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে ৮ হাজার ৬৭৫টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সোয়া ১২ লাখের মতো। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাকরির বাজারে এখন দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে দক্ষ কর্মীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এসব কারণেও কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ছে।
আবার আগে নিয়ম ছিল— মাধ্যমিক বা এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হতে হবে ডিপ্লোমা কোর্সে। এসএসসির পর দুই বছরের বেশি শিক্ষা বিরতি থাকলে আর সেই সুযোগ মিলবে না। সেই শর্তও তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বয়সসীমা শিথিল হওয়ায় এখন রি-স্কিলিংয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে কারিগরিতে শিক্ষার্থী সংখ্যাও বাড়ছে। এ কারণেই সরকার এই মাধ্যমকে আগের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
এদিকে, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা সমস্যা-সংকট রয়েছে। পাঠদানের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই খাতে গেজেটেড কর্মকর্তার পাশাপাশি নন-গেজেটেড কর্মকর্তা রয়েছেন। আবার ক্যাডার সার্ভিসের পাশাপাশি রয়েছেন নন-ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও। কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরে ২০০৬ সালের পর থেকে ক্যাডার সার্ভিসে কোনো নিয়োগ হয়নি। অন্যদিকে ২০১৬ সাল থেকে বন্ধ সব ধরনের নিয়োগ। ফলে স্বল্প জনবল দিয়েই কাজ চলছে কারিগরি শিক্ষার। এসব সংকট কাটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরে গেজেটেড ও নন-গেজেটেড কর্মকর্তা নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগ থেকে ভেটিং হয়ে আসবে। আমরা সবসময় এ বিষয়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছি, যেন কাজটি দ্রুত হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) করবে। সেটাও প্রস্তুত আছে। আমরা সরকারের কাছ থেকে ১২ হাজার ৬০৭টি পদের অনুমোদন পেয়েছি। পদ সৃষ্টির আদেশ দুয়েক দিনের মধ্যেই জারি হবে। এসব পদের নিয়োগ অবশ্য একই অর্থবছরে হবে না। ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১ অর্থবছরের নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে হবে। তবে যে পদগুলো আমাদের কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর থেকে নিয়োগ করা হয়, সে নিয়োগের প্রক্রিয়া নভেম্বর থেকে শুরু হবে।
সচিব জানান, সারাদেশের একশটি টেকনিক্যাল কলেজে মোট ৬ হাজার চারশ পদ সৃজন করা হয়েছে। ভেটিং হয়ে এলে এসব পদের বিপরীতেও নিয়োগ শুরু হবে। ফলে আগের ১২ হাজার ৬০৭টি পদসহ কারিগরি খাতে মোট পদের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৯ হাজার।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। সচিব বলেন, কারিগরির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত হয়েছে, কিন্তু শিক্ষকদের এমপিভুক্তির ক্ষেত্রে দেরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদফা বৈঠক করেছি। সব নীতিমালা ও সমস্যা পর্যালোচনা করে আমরা তাদের এমপিওভুক্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছি। এমপিও প্রদান সংক্রান্ত যে কমিটি আছে, তারা পরবর্তিত নীতিমালার আওতায় বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন। আশা করছি অক্টোবরের মধ্যে কারিগরিতে এমপিওভুক্তির যে প্রক্রিয়াটি আটকে আছে, সে বিষয়ে সুপারিশ পাব এবং জট নিরসন করা সম্ভব হবে।
জানা যায়, সরকার চলতি অর্থবছরের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ১৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে) এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেই লক্ষ্য পূরণের পথেই কাজ চলছে।
এদিকে, সাধারণ স্কুল ও মাদরাসাগুলোতেও বাধ্যতামুলক হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে, ২০২২ সালে সপ্তম শ্রেণিতে ও ২০২৩ সালে অষ্টম শ্রেণিতে প্রাক-বৃত্তিমূলক শিক্ষা হিসেবে একটি কারিগরি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হবে। অন্যদিকে নবম-দশম শ্রেণিতে একটি কারিগরি বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে চালু হবে ২০২১ সালেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগে সচিব জানিয়েছেন, এই কার্যক্রমন পরিচালনার জন্যও নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে। ৪০টি অধ্যক্ষ পদে সম্প্রতি পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বাকি পদোন্নতিগুলো অক্টোবরে দেওয়া হবে।