কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুত নয় বিএনপি
১ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৫৮
ঢাকা: দলীয় পরিমণ্ডলে জাতীয় কাউন্সিলের গুঞ্জন শোনা গেলেও এই মুহূর্তে কাউন্সিলের মতো এত বড় কর্মযজ্ঞ আয়োজনের ব্যাপারে মোটেই প্রস্তুত নয় বিএনপি। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ নির্বাহী কমিটি দিয়েই আপাতত সাংগঠনিক কাজ চালাতে হবে দলটিকে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পর্যায়ে গেলে সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের চেষ্টা করবে দলটি।
সূত্রমতে, দলীয় হাইকমান্ড ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোনো ধরনের সবুজ সংকেত ছাড়াই সম্প্রতি বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন সম্পর্কে নিজেদের ব্যক্তিগত মত মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন। দলের এই অংশটি কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপির মহাসচিব পরিবর্তন হচ্ছে বলেও প্রোপাগান্ডা চালায়। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল করার ব্যাপারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তাগিদ দিয়েছেন— এমনটিই বলার চেষ্টা করেন তারা।
তবে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ দেড় বছর আগে শেষ হলেও এই মহামারির মধ্যে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কোনো পরিকল্পনা নেই বিএনপির। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে টানা ছয় মাস বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি সাংগঠনিক কার্যক্রম ফের শুরু হলেও জাতীয় কাউন্সিল করার জন্য সেটি যথেষ্ট নয়। এখন বরং সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও মহানগর কমিটিগুলো রিভিউ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ শেষ করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কাউন্সিল করতে হলে বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন করতে হবে। সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটির সদস্যরাই হবেন জাতীয় কাউন্সিলের ভোটার বা কাউন্সিলর। তাদের প্রত্যক্ষ ভোটেই কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা নির্বাচিত হবে— এমনটি বিধান রয়েছে বিএনপির গঠনতন্ত্রে।
তবে বিগত দিনগুলোতে কাউন্সিলের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই দলের চেয়ারপাসন নির্বাচিত হয়েছেন। আর জাতীয় কাউন্সিলে যোগ দিতে আসা কাউন্সিলররাও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ভার চেয়ারপারসনের ওপর ন্যাস্ত করে যে যার গন্তব্যে চলে গেছেন। পরবর্তী সময়ে চেয়ারপারসনের একক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যপদগুলো পূরণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলের ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন একই প্রক্রিয়ায় হবে। তারপরও ‘লোক দেখানো’ যে জাতীয় কাউন্সিল বা সম্মেলন, সেটি করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিটুকু এই মুহূর্তে বিএনপির নেই। শর্তসাপেক্ষ মুক্ত দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশও নিতে পারছেন না। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে ফিরতে পারছেন না। সুতরাং প্রধান দুই নেতার অনুপস্থিতিতে কাউন্সিল আহ্বান এবং সেটি ‘সফলভাবে’ বাস্তবায়ন বিএনপির পক্ষে এই মুহূর্তে রীতিমতো অসম্ভব।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মতো ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত ৫০টি জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এসব জেলার সম্মেলন এবং জেলা সম্মেলনের আগে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে হবে। করোনা দুর্যোগের মধ্যেই গত জুলাই মাসে তৃণমূলের সাইনিং অথরিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কমিটিগুলো রিভিউ করে কেন্দ্রে পাঠাতে। সর্বশেষ খবর বলছে, সে প্রক্রিয়াও বেশি দূর এগোয়নি। এমন পরিস্থিতি আগামী ডিসেম্বর তো দূরের কথা, পরের ডিসেম্বরেও বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল সম্ভব না— এমনটিই মনে করছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৃণমূল বিএনপি পুনর্গঠনের দায়িত্বে থাকা দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি পুনর্গঠনের কিছু কাজ আমরা এগিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। করোনার কারণে সেগুলো শেষ করা সম্ভব হয়নি। এখনো বেশিরভাগ জেলা, উপজেলার কাজ বাকি। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় কাউন্সিরের ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা বলা মুশকিল।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় কাউন্সিলের আগে জেলার সম্মেলন করতে হবে। করোনার কারণে তো আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত ছিল। সেটা পুনরায় চালু হয়েছে। এখন আমরা চেষ্টা করছি তৃণমূলের কমিটিগুলো গঠন করতে। তার পর জেলা সম্মেলন। এরপর আমরা জাতীয় কাউন্সিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। কাউন্সিলের মতো এত বড় একটা বিষয়ে তো হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।’