জনগণের পাশে আছি, তাদের আস্থা আমাদের সম্বল: প্রধানমন্ত্রী
৩ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৩২
ঢাকা: আমরা মানুষের পাশে আছি, মানুষের পাশে থাকবো উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, জনগণের সংগঠন হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আর আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে। সেটা এবারও এই দুর্যোগ- করোনা মহামারির সময়ও এটা প্রমাণ হয়েছে। জনগণের আস্থা বিশ্বাসটা হচ্ছে আমাদের একমাত্র সম্বল, সেটাই আমাদের শক্তি।
আর দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, সাংগঠনিক শক্তিটা হচ্ছে সবচেয়ে বড়। আওয়ামী লীগের যে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক শক্তি আছে, এই করোনা মোকাবিলার সময় তারা যখন মাঠে নেমেছে তখনি সেটা প্রমাণিত হয়েছে।
শনিবার (৩ অক্টোবর) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসভা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের পার্টির কাজগুলো মোটামুটি কিছু কিছু জায়গায় সচল রয়েছে। ইলেকশনগুলো হয়েছে। সেখানে আমি মনে করি, আমাদের সাংগঠনিক কাযর্ক্রম খুব বেশি এখন যাতায়াত না করলেও কিছু সাংগঠনিক কাযক্রমগুলো আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের হয়ত সম্মেলন হয়েছে কিন্তু করোনার কারণে আমরা আর কমিটি করতে পারিনি বা কারো খোঁজও নিতে পারিনি যেতেও পারেনি, সেগুলোর আমার এখন মনে হয় একটা সময়। আস্তে আস্তে আমরা সেগুলোর কাজ করতে পারবো। আমাদের সেই কাজগুলো করে দিতে হবে। সাংগঠনিক শক্তিটা হচ্ছে সবচেয়ে বড়। আওয়ামী লীগের যে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক শক্তি আছে, এই করোনা মোকাবিলার সময় তারা যখন মাঠে নেমেছে তখনি সেটা প্রমাণিত হয়েছে।’
আরও পড়ুন- ‘আ.লীগ ক্ষমতায় না থাকলে কত মানুষ মারা যেত, বলা যায় না’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজকে যে কারণে আমাদের প্রায় ৫২২ জন নেতাকর্মীরা সব মৃত্যুবরণ করেছে। এই যে এতো বড় স্যাক্রিফাইস বোধহয় আর কোনো দল তো করেনি। তারা লিফ সার্ভিস দিয়েছে। ভালো মিডিয়া আছে। আর আমি তো প্রাইভেটে টেলিভিশন দিয়েছি রেডিও দিয়েছি অনেক পত্রিকা, যে যার মতো আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে বলেই যাচ্ছে কিন্তু তাদেরকে মাঠে মানুষের পাশে দেখা যায়নি। তারা কেউ আবার বিচার করে, আওয়ামী লীগ কতটুকু করলো, কতটুকু করলো না? কিন্তু তারা আয়নাতে নিজের চেহারা দেখে না। এই দেশে গরিব মানুষের সেবা করার অনেক লোক অনেক রকমের প্রতিষ্ঠান, অনেক কার্যক্রম আমরা দেখি কিন্তু করোনাকালীন সময় তো তাদের কোনো কার্যক্রম আমরা দেখি নিই। তখন সবাই ঘরে, তখন মানুষের পাশে আর কেউ নাই। মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য সব থেকে কাজ করে। এই বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নতির জন্যই জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই স্বাধীনতার সুফলটা যেন প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌছায় আমরা যেন দারিদ্রমু্ক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারি, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ নির্বাচনকালীন সময় থেকে আমরা যদি একটু বিচার করে দেখি, কিভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তাদেরকে একদিকে হত্যা করেছে নারী নির্যাতন করেছে পাশবিক অত্যাচার করেছে, ঘরবাড়ি দখল করেছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে ধ্বংস করেছে, ভূমি অফিস পুড়িয়েছে, বাস ট্রাক লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহন পুড়িয়েছে। তাদের ওই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ আমরা দেখেছি। কিন্তু সেগুলো আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। সবাইকে আমরা সহযোগিতা করেছি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত এখনো তাদের খোঁজ নিচ্ছি। এবং যেখানে যতটুকু পারি তাদের সাহায্য আমরা করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মানুষের পাশে আছি, মানুষের পাশে থাকব। আমি দেশবাসীকে এইটুকু বলতে চাই যে, জনগণের সংগঠন হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আর আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে এবং সেটা এবারও এই দুযোগ করোনা মহামারি এর সময়ও এটা প্রমাণ হয়েছে। জনগণের আস্থা বিশ্বাসটা হচ্ছে আমাদের একমাত্র সম্বল, সেটাই আমাদের শক্তি।’
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা এ অবস্থাতেও যেখানে সারাবিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি, মানে অনেকে তো মাইনাসে চলে গেছে, তারপরও আমরা কিন্তু ৫ দশমিক ৬’ র কাছাকাছি আমরা অর্জন করতে পেরেছি। হয়ত আমরা আরও বেশি করতে পারব। অর্থ্যাৎ আমরা আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলা একদিকে অপরদিকে আমাদের দেশের অর্থনীতি সচল করা মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদেরকে উন্নত জীবন দেয়া এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
‘এবার নদীভাঙনে অনেক মানুষের ক্ষতি হয়ে গেছে, সেই নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভূমিহীন যারা নিঃস্ব হয়ে গেছে তাদেরকে সাহায্য করবার জন্য আমরা বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রেখেছি’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমাদের ঘোষণা, গৃহহীন ভূমিহীন তাদেরকে আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ব্যাপকভাবে চলছে। সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম আমরা এক কোটি গাছ লাগাব। কিন্তু আমাদের কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠন মিলে এক কোটির থেকে বেশি গাছ কিন্তু রোপণ করেছি। সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা একই কর্মসূচি নিয়েছি। বৃক্ষরোপর করা, সবুজ বেষ্টনী করা প্রকৃতি রক্ষা করা সেটাও আমরা করে যাচ্ছি। কাজেই সার্বিকভাবে একদিকে দুর্যোগ মোকাবিলা করা আরেকদিকে দেশটাকে সচল রাখা সব রকমের কাজেই আমরা করে যাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের প্রাণপণ। আর ডিজিটাল বাংলাদেশে হয়েছে বলেই এটা আমাদের জন্য সম্ভব হয়েছে। আমাদের কার্যনির্হী সংসদের সকল সদস্যকে আমরা ডাকতে পারেনি। হয়ত পররর্তী মিটিংয়ে এবার যে সেট, আবার নতুন এক সেট দিয়ে এইভাবে আমরা আস্তে আস্তে সবাইকে নিয়ে আসব। আপনাদের মূল্যবান মতামতও শুনতে চাই, অভিজ্ঞতাও শুনতে চাই, আগামী দিনে কি করণীয় সেটাও জানতে চাই এবং মাঠ পর্যায়ে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবেন আমরা সেটিই চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে, জনগণের পাশ থাকবে এবং জনগণের জন্যই আওয়ামী লীগ সব সময় কাজ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন এই জনগণকে একটা উন্নত জীবন দিতে সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার স্বপ্ন করতে। মুজিববর্ষে সেটাই আমাদের বড় অঙ্গীকার।’
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা গণভবন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা