ত্যাগীদের ঠাঁই দিতে হবে, ‘মাই ম্যান’ ভরপুর কমিটি নয়: শেখ হাসিনা
৩ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৫৬
ঢাকা: তৃণমূলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ‘মাই ম্যান’ নেতাদের জায়গা দেওয়া যাবে না বলে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলের দুর্দিন-দুঃসময়ের ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাদের ঠাঁই দিতে হবে। কোনো নেতা বা এমপিদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কমিটি গঠন করা যাবে না।’
শনিবার (৩ অক্টোবর) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এমন সিদ্ধান্ত দেন শেখ হাসিনা। তার আগে তিনি সূচনা বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসভা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, আসন্ন শীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে, সেটা মোকাবিলা জন্য দলের নেতাকর্মীদের এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করে জনগণের পাশে থাকার নির্দেশনা দেন তিনি।
জনগণের পাশে আছি, তাদের আস্থা আমাদের সম্বল: প্রধানমন্ত্রী
এছাড়া আটটি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম চূড়ান্ত করা হয়েছে। কমিটিগুলো আজকের মধ্যে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। বৈঠকে সিদ্ধান্তের বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিকেল ৪টায় তার নিজ সরকারি বাসভবনে ব্রিফিং করবেন বলেও জানা গেছে।
বৈঠকে আটটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা কোন জেলা কমিটিতে সিনিয়র জুনিয়র জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করা হয়েছে, কারা কারা কাদের নিজেদের লোকদের জায়গা দিয়ে ত্যাগী পরিক্ষীত নেতাদের বাদ দিয়েছে সে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে কে কোথায় কি সমস্যা ফেস করছে, সেটা আমাকে অবহিত করবে। আমি চাই তৃণমূলে দলের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সমাজে যারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষজন আছে তাদেরও দলে টানতে হবে। তোমরা কাজ করতে গিয়ে কমিটি করতে গিয়ে কোথাও কি সমস্যা হচ্ছে তা আমাকে জানাবে। দলে সেক্রেটারি আছে তাকে জানাবে।’
আট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে সাত জন কথা বলেন। দুই জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কথা বলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ। স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় সদস্য গোলাম কিবরিয়া চিনু, মেরিনা জাহান কবিতা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সংগঠন ও সরকারের যৌথ সহযোগিতায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেখেছি যখনই যাকে বলেছি প্রত্যেকে এতটুকু পিছপা হয়নি। মানে সব রকমের সহযোগিতা নিয়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে হয় একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেই মানুষ এই সহযোগিতাটা পেয়েছে। এখানে যদি অন্য কেউ থাকত কত যে মানুষ মারা যেত কত যে দুরাবস্থা হতো তা ভাষায় বলা যায় না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ এই করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী একটা অর্থনৈতিক মন্দা আসবে। আর মন্দার সঙ্গে কিন্তু দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, খাদ্যভাব দেখা দেয়। বাংলাদেশে যেন কোনোমতে খাদ্যভাব দেখা না দেয়। সেই জন্য কৃষক মাঠে থাকে, ফসল যেন উৎপাদন হয় উৎপাদিত ফসলটা আমাদের কাছে থাকলে পরে অন্তত খাবারের অভাবটা যেন নাহ হয়। আল্লাহর রহমতে সেটা কিন্তু হয়নি।’
কৃষকের ধান কাটা দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের এগিয়ে এসে সহযোগিতা করার ব্যাপারেও সবার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটা সমস্যায় আমাদের পড়তে হয়েছে, বিভিন্ন দেশে আমাদের যারা কর্মীরা কাজ করে অনেক দেশেই তো এখন কাজ বন্ধ, অনেক দেশ থেকে আমাদের লোক ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। আমরা কিন্তু আমাদের মানুষকে মানুষ হিসাবে বিবেচনা করেছি। আমরা তাদেরকে কিন্তু যেখানে যাদের ফিরে আনার কথা আমরা কিন্তু ফিরে এনেছি।’
স্পেশাল প্লেন পাঠিয়েও তাদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে অবহিত করেন শেখ হাসিনা। এর কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কারণ তারা আমাদের সন্তান। তাদের ভালো-মন্দ তো আমাদের দেখতে হবে। তাদের জন্য কিছু ব্যবস্থাও আমরা করেছি। তাদেরও আমরা প্রণোদনা দিচ্ছি। অনেক জায়গায় আমাদের লোকের কাজ ছিল না, তাদেরকে নগদ টাকা-পয়সা পর্যন্তও দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রবাসী কর্মীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এইভাবে প্রত্যেকটা সেক্টরে আমরা কিন্তু কাজ করেছি। করে আজকে আমরা চলছি।’