হেফাজতের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কাজে লাগাতে চেয়েছিল জামায়াত
৩ অক্টোবর ২০২০ ২৩:১০
ঢাকা: কওমি মাদরাসার প্রধান ঘাঁটি চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সৃষ্ট হেফাজতে ইসলামের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। হেফাজতের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মধ্যে ঢুকে প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী গ্রুপের মধ্যে ‘রক্তক্ষয়ী’ সংঘর্ষ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা করেছিল স্বাধীনতাবিরোধী এই রাজনৈতিক সংগঠনটি। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আদর্শগত দ্বন্দ্ব থাকায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত তাদের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সফল হতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে ‘হেফাজতকাণ্ডের’ পর কার্যত দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির আমির প্রয়াত শাহ আহমদ শফী ও তার অনুসারীরা সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচি, বক্তব্য, বিবৃতি দিতে চাইতেন না। তারা সবসময় চাইতেন কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রেখে সরকারের কাছ থেকে দাবি-দাওয়া আদায় করতে। এ পন্থা অবলম্বন করে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাওরায়ে হাদিস সনদকে ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি মাস্টার্স ডিগ্রির সমমানের স্বীকৃতি আদায়ে সমর্থ হন শাহ আহমদ শফী।
কিন্তু হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ও তার অনুসারীরা সব সময় চাইতেন সরকারের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারবিরোধী বিবৃতি, বক্তব্য এমনকি ছোট-খাটো কর্মসূচিও দিতেন তারা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ‘কোমলমতি’ ছাত্ররা সারাদেশে যে আন্দোলন গড়ে তোলে, তাতে সমর্থন দেন হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। সংগঠনের প্যাডে বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে এ আন্দোলনে সমর্থন জানান তিনি।
সূত্রমতে, সরকারের সঙ্গে শাহ আহমদ শফীর একরকম ‘সমঝোতা’ সত্ত্বেও ২০১৩ সালের পর জুনায়েদ বাবুনগরীর সরকারবিরোধী অবস্থানকে কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে ওঠে জামায়াত। হেফাজতের ভেতর থাকা জামায়ামপন্থী নেতারা সবসময় বাবুনগরীকে ইন্ধন দিতে থাকেন সরকারবিরোধী অস্থান আরও জোরালো করার জন্য। মাবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ‘নিঃশর্ত মুক্তি’ দাবি করা হেফাজতের শীর্ষ নেতা মাওলানা মামুনুল হক ও তার অনুসারীরা এ কাজে নেতৃত্ব দিতে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর কয়েকদিন আগে হাটহাজারী মাদরাসায় যে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয় এবং যে বিশৃঙ্খলাকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর আগ মুহূর্তে মাদরাসার মহাপরিচালক পদ থেকে আহমদ শফীর পদত্যাগ ও ছোট ছেলে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করতে হয়, এর পেছনে জামায়াতে ইসলামীর হাত রয়েছে। আহমেদ শফীর জানাজা ও দাফন কার্যক্রমে জামায়াত ইসলামীর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান চৌধুরীসহ জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার অংশগ্রহণ এই ধারণাকে আরও পোক্ত করছে।
তারা বলছেন, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সাধারণত পরিবারের সদস্য কিংবা কাছের আত্মীয়রাই মরহুমের খাটিয়া বহন করেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, হাটহাজারী মাদরাসা ও হেফাজত ইসলাম এখন কি জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে? সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, সেখানে স্বাধীনতাবিরোধী বিতর্কিত দল জামায়াত নেতাদের উপস্থিতির মূল উদ্দেশ্য নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করা এবং জামায়াত ঘরানার নেতা হিসেবে পরিচিত জুনায়েদ বাবুনগরীকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করা।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শাহ আহমদ শফীর দাফন-কাফনের পুরো প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়েই জামায়াত নেতাদের দেখা যায়নি। কিন্তু কবরে নামানোর কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ করে জামায়াতের শীর্ষ কয়েকজন নেতা কোথা থেকে উড়ে এসে খাটিয়ায় হাত দিয়ে ১০/১২ কদম হাঁটেন। পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, আহমদ শফীর প্রতি শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা থেকে নয়, হীন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে জানাজায় হাজির হয়েছিলেন জামায়াত নেতারা। সেই উদ্দেশ্যের মূলে ছিল নিছক একটি ফটো শুট!’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি মোহম্মদ ওয়াক্কাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘শফী হুজুরের মৃত্যুর আগে হাটহাজারি মাদরাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনা ও তার জানাজায় জামায়াত নেতাদের ঝটিকা উপস্থিতি আমাদের কাছে রহস্যাবৃত মনে হুয়েছে। আমরা সরকারের কাছে এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’
এ বিষয়ে জানতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
জামায়াত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ জুনায়েদ বাবুনগরী বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শাহ আহমদ শফী হাটহাজারী মাদরাসা হেফাজতে ইসলাম