Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিমানের রানওয়ে উন্নয়নে পরামর্শক ব্যয় ১৮ কোটি টাকা!


৪ অক্টোবর ২০২০ ০৯:১৪

ঢাকা: দেশের তিনটি বিমানবন্দরের রানওয়ে ও লাইটিং সিস্টেম উন্নয়নে ৯১৮ জনমাস পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ১৭ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ‘যশোর বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ে সারফেসে অ্যাসফল্ট উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এসব পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত করার জন্য রানওয়েতে এসফল্ট কনক্রিট ওভার-লেকরণ এবং রানওয়ে লাইটিং সিস্টেম স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা সহজ ও সুন্দর হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানত চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংকে বলেন, ‘প্রকল্পটি এখনও আমার নজরে আসেনি। এত পরামর্শক কেন লাগবে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। এটি টেকনিক্যাল বিষয়, তাই হঠাৎ করে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। খোঁজ নিয়ে তারপরই মন্তব্য করতে হবে।’

বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তহবিল থেকে ১১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেকে) অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- যশোর, সৈয়দপুর ও শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়েতে যথাক্রমে ২৮০ মিলিমিটার, ২১০ মিলিমিটার ও ২৭০ মিলিমিটার পুরুত্বে এসফল্ট কনক্রিট ওভার-লেকরণ, বিমানবন্দরগুলোর এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং (এজিএল) সিস্টেমের আপগ্রেডেশন, রানওয়ে সাইড-স্ট্রিপসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রতিটি বিমানবন্দরের জন্য পর্যাপ্ত ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি করে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক গড়ি ক্রয় ইত্যাদি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যেই প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। একনেকের যেকোনো সভায় এটি উপস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা। ওই সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কনসালটেন্সি বাবদ ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের প্রস্তাবিত পরামর্শক সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লিখিত তিনটি বিমানবন্দরের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে। এই সমঝোতা স্মারকে পরামর্শকদের সংখ্যা, অভিজ্ঞতা ও কাজের সময় অনুযায়ী ব্যয় বিভাজন উল্লেখ করতে হবে। এই সুপারিশ মেনেই এত জনমাস পরামর্শক চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে প্রকল্প-সারসংক্ষেপে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ওই পিইসি সভায় আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে কোনো প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পে প্রস্তাবিত তিনটি জিপের পরিবর্তে একটি, তিনটি পিকআপ, তিনটি অগ্নিনির্বাপক গাড়ি এবং ছয়টি মোটরসাইকেল কেনার সংস্থান রাখতে হবে। অগ্নিনির্বাপক গাড়ির প্রাক্কলিত ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা করে নির্ধারণ করতে হবে এবং মূল্য নির্ধারণের ভিত্তি ও গাড়ির স্পেসিফিকেশন ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখ করতে হবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহীর শাহমখদুম বিমানবন্দর অন্যতম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠিত অর্ধশত বছরেরও অধিক সময় ধরে যশোর বিমানবন্দর একটি পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে পরিচালিত। এ বিমানবন্দরে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন আট থেকে নয়টি যাত্রীবাহী বিমান ওঠানামা করে। এই বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য (ওভার রানসহ) প্রায় আট হাজার ৬০০ ফুট ও প্রস্থ (সোল্ডারসহ) ১৮০ ফুট। বর্তমানে রানওয়ের বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের আয়ু অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু গত কয়েকবছরে বিমান চলাচলের চাপে রানওয়ে সারফেসে আন্ডুলেশনসহ ক্র্যাক সৃষ্টি হচ্ছে। যা মেরামতের মাধ্যমে বিমান চলাচল উপযোগী করে রাখা হচ্ছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫টি বিমান ওঠানামা করে। এ বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য (ওভার রানসহ) ৬ হাজার ৮০০ ফুট ও প্রস্থ (সোল্ডারসহ) ১২০ ফুট। প্রায় চার দশক আগে তৈরি এ বিমানবন্দরের রানওয়ে পেবমেন্ট এত অধিক সংখ্যক বিমানের রিপিটেড লোড বহনে উপযোগী নয়। তাই গত কয়েকবছরে রানওয়ের সারফেস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রানওয়ের উপরিভাগের বিটুমিনাস সারফেস থেকে পাথর উঠে আসাসহ ডিপ্রেসন ও ক্র্যাকের সৃষ্টি হচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সাময়িক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করে রানওয়েকে বিমান চলাচর উপযোগী করে রাখা হচ্ছে।

এছাড়া রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য (ওভার রানসহ) ৬ হাজার ৬০০ ফুট, প্রস্থ (সোল্ডারসহ) ১২০ ফুট। রানওয়েটি সারফেস বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে আচ্ছাদিত। বর্তমানে এ বিমানবন্দরে দিনে চারটি বিমান ওঠানামা করে। এবং খুব শিগগিরই যাত্রীবাহী বিমানের সংখ্যা আরও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। নির্মাণের পর থেকে সুদীর্ঘ তিন দশকে রানওয়ের উপরিভাগের বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের আয়ু শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানের টপ সারফেস থেকে প্রতিনিয়ত পাথর উঠে আসাসহ মাঝে মাঝে আস্তরণও উঠে আসে। যা মেরামতের মাধ্যমে রানওয়েকে সচল রাখা হয়। এজন্য উল্লিখিত তিনটি বিমানবন্দরে নিরাপদ বিমান ওঠানামা নিশ্চিত করার জন্য রানওয়েতে এসফল্ট কনক্রিট ওভার-লেকরণ এবং রানওয়ে লাইটিং সিস্টেম স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস সারাবাংলাকে বলেন, ‘যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহীর শাহমখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ে সারফেস অ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভার-লেকরণের মাধ্যমে রানওয়েতে নিরাপদ বিমান ওঠানামা নিশ্চিত হবে এবং যাত্রীসেবার মানও উন্নত হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।’

উন্নয়ন পরামর্শক ব্যয় বিমানবন্দর রানওয়ে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর