নোয়াখালীতে নারী নির্যাতন: চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
৫ অক্টোবর ২০২০ ২০:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাছপুরে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় বিক্ষোভ হয়েছে চট্টগ্রামে। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক-সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মিছিল সমাবেশের মাধ্যমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। এসব কর্মসূচি থেকে দ্রুততার সঙ্গে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ধর্ষক ও নিপীড়কদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।
সোমবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে ‘সর্বস্তরের সচেতন নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশ থেকে ধর্ষকরে পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে তাদের বিচার ও সামাজিকভাবে বয়কট করার দাবি জানানো হয়েছে।
সমাবেশে কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, ‘নোয়াখালীর যে ঘটনা, সারাদেশে একের পর এক যে ধর্ষণের ঘটনা, আমরা লজ্জিত, হতাশ এবং বিক্ষুব্ধ। আজ শুধু একজন আমার মা কিংবা বোনই ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন না, ধর্ষিত হচ্ছে আমার দেশ। একটির পর একটি ঘটনা ঘটবে, আমরা কি শুধু বিচারের দাবি করেই যাব? কেন এসব ঘটনা ঘটছে? ধর্মীয় অনুষ্ঠানে-সভায় নারীকে হেয় করে, কটাক্ষ করে বক্তব্য যারা দেন, তাদের লাখ লাখ অনুসারী আছেন। সেই বক্তব্য ফেসবুকে-ইউটিউটে ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্য থেকে তাদের অনুসারীরা কি ধর্ষণে উৎসাহ পাচ্ছে না? রাজনীতির নামে ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতা যারা দিচ্ছে, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। তাদেরও বিচার করতে হবে।’
গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান বলেন, ‘একজন অপরাধী অপরাধ করার পর যদি বিভিন্ন কৌশলে তাকে পার পাইয়ে দেওয়া হয়, সেই অপরাধী আরও বেপরোয়া হয়ে যায়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আইনের শাসনের অভাবের কারণে দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। একটি ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আমরা প্রতিবাদে সোচ্চার হই। প্রশাসন সক্রিয় হয়। অথচ অসংখ্য ঘটনা ফেসবুক কিংবা গণমাধ্যমের আড়ালে ঘটে যাচ্ছে, আমরা জানতেও পারছি না। ঘটনার প্রতিবাদ করতে হবে, একইসঙ্গে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও আইনের শাসনের অভাবের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিবাদ জারি থাকলেই কেবল এসব ঘটনায় দ্রুততম সময়ে বিচার করতে সরকারকে বাধ্য করা সম্ভব হবে।’
আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার করতে না পারলে এই ঘৃণ্য প্রবণতা রুখে দেওয়া যাবে না। সাংস্কৃতিক চর্চার অনুপস্থিতি, নানা রকম রাজনৈতিক অপশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা ধর্ষকদের বেপরোয়া করে তুলেছে। বিচার ও শাস্তিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে নারী নিপীড়ন বন্ধ করা যাবে। সেজন্য আমাদের সবাইকে প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে।’
সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রীতম দাশের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নারী নেত্রী সিতারা শামীম, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, সাংবাদিক আহমেদ মুনীর ও সৌমেন ধর, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী, শ্রমিক নেত্রী বাপ্পী দেব বর্মণ, সাবেক ছাত্রনেতা নাজিম উদ্দিন, সাংবাদিক নেতা মহররম হোসাইন ও লতিফা আনসারী রুনা, হিউম্যানিটি ফার্স্ট মুভমেন্টের মিলন দত্ত ও আবৃত্তি শিল্পী প্রণব চৌধুরী।
প্রগতিশীল ছাত্রজোট
নগরীর চেরাগির মোড়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোট, চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশ থেকে নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের পাশাপাশি পাহাড়-সমতলে সংঘটিত সকল ধর্ষণের বিচার দাবি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অ্যানি সেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম ও জিএইচ হাবিব, উদীচী সংগঠক শীলা দাশগুপ্তা, সিপিবির নারী সেলের সিতারা শামীম ও চারণের সোমা চক্রবর্তী। ছাত্রফ্রন্ট নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রিজুলক্ষ্মী অবরোধের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্রফ্রন্টের একাংশের নগর শাখার সভাপতি রায়হান উদ্দিন ও অপর অংশের সহ-সভাপতি দীপা মজুমদার।
একই ঘটনার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনেও বিভিন্ন সংগঠন মিছিল-সমাবেশ করেছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতি
নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের ঘটনার পাশাপাশি দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির অ্যাডভোকেট আবু হানিফ ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘সারাদেশে গত কয়েকমাসে ধর্ষনের ঘটনা বেড়ে গেছে। শুধু নারী নয়, শিশুরাও ব্যাপকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব ঘটনা ঘটছে বলে বারবার অভিযোগ উঠছে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সীমাহীন অবনতিও প্রকাশ পাচ্ছে। আমরা মনে করি, এসব ঘটনাকে সামাজিক বা নৈতিক অবক্ষয় বলে ছেড়ে না দিয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। একইভাবে প্রশাসনকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজনৈতিক চিন্তার ঊর্দ্ধে উঠে নির্মোহভাবে কাজ করতে হবে।’