৩০০ আসনে প্রার্থী, নতুন জোটের সন্ধানে জাপা— টার্গেট মন্ত্রিসভা!
৬ অক্টোবর ২০২০ ১৪:০০
ঢাকা: বেশ কিছুদিন ঝিমিয়ে থাকলেও হঠাৎ করেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো ঢের সময় বাকি। তবে এখনই সেই নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ ‘যোগ্য’ প্রার্থীর সন্ধান শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের নেতৃত্বে রেখে নতুন একটি নির্বাচনি জোটও গঠন করতে চায় জাপা। এর মধ্যে দলের মধ্যেকার বিভেদ-দ্বন্দ্ব নিরসনেও উদ্যোগ নিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টির খুব শিগগিরই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র বলছে, হঠাৎ করে দলের সক্রিয় হয়ে ওঠার নেপথ্যে যতটা সাংগঠনিকভাবে শক্তি হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে, তার চেয়েও বেশি রয়েছে ‘অন্য’ উদ্দেশ্য। সূত্র বলছে, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল হলেও সাংগঠনিক তৎপরতা ও নতুন জোট গঠনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি মূলত সরকারের কাছে দরকষাকষির পাল্লা শক্তিশালী করতে চায়, মহাজোটের কাছে নিজেদের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলতে চায়। আর এর মাধ্যমে দশম সংসদের মতো একাদশ সংসদেও মন্ত্রিসভাতে জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্যের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, দলের শীর্ষ দুই নেতা রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যেকার এই দ্বন্দ্বের মীমাংসা হলে মূলত দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেকটাই নিরসন হয়ে যাবে। আর সেই দূরত্বের বরফ গলতে শুরু করেছে বলেও জানাচ্ছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, সম্প্রতি জি এম কাদেরের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে রওশন এরশাদের একাধিক বৈঠকও হয়েছে।
এদিকে, জেলা-উপজেলা ও বিভাগীয় শহরসহ সারাদেশে জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসবের পাশাপাশি দেশের বাইরে দলটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেও ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে জাপা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হলেও তাদের সঙ্গে টেলিফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক নেতা।
এদিকে, দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, জোট গঠনের জন্য জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকরা এরই মধ্যে ছোট ছোট কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছেন। জোট গঠন অবশ্য দলটির জন্য নতুন কিছু নয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০১৭ সালে ১৬ মে দেশের ৫৮টি রাজনৈতিক দল নিয়ে নির্বাচনি জোট গড়ে তুলেছিলেন জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ওই জোটে মাত্র দু’টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হলেও সংখ্যার বিচারে সেটিই ছিল দেশের বৃহত্তম জোট।
এবারে জাতীয় পার্টি জোট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের মধ্যেও আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। পরিস্থতি স্বাভাবিক হলে জোট গঠন নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তাদের মধ্যে। একই সঙ্গে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য যোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রণয়ন করার কাজও শুরু করবে দলটি।
দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে এমন ‘গতিশীলতা’র নেপথ্যে গত সংসদের মতোই এ সংসদেও মন্ত্রিসভার কয়েকটি পদ জাপা নেতাদের টার্গেট বলে মনে করছেন কেউ কেউ। দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলে থেকেও সরকারের মন্ত্রিসভায় একাধিক জাপা সদস্য ছিলেন বহাল তবিয়তে। তাতে করে ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের তকমাও লেগেছিল তাদের নামে। একাদশ জাতীয় সংসদে সে সুযোগ পায়নি জাতীয় পার্টি। কিন্তু দলের একাধিক নেতা মন্ত্রিত্বের প্রত্যাশাতে কাজ শুরু করেছেন। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ‘গতিশীলতা’র পেছনেও কাজ করছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদে স্থান পেতে দলটির কয়েকজন সংসদ সদস্য দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে দুয়েকজন এর আগের সরকারের সময়েও মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন। তাদের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন আরও কয়েকজন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, জাতীয় পার্টি বরাবরই গতিশীল একটি দল। কূটনৈতিক মহলে জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা আগেও ছিল, এখনো আছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কূটনৈতিক মহলে জাতীয় পার্টির তৎপরতা দৃশ্যমান হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও জাতীয় পার্টি এগিয়ে আসবে।
এদিকে, জোট গঠনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) সারাবাংলাকে বলেন, একটি জোট গঠনের জন্য ইসলামিক দল সহ দুয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। জোট গঠন নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জোট গঠনের বিষয় নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই জোট কোনো আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য গঠন করা হবে না, জাতীয় ইস্যু ও জনগণের চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে জোট গঠন করা হবে।
জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে সারাদেশে ঝটিকা সফরে বের হওয়ার পারিকল্পনা রয়েছে বলে জানান জি এম কাদের। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। আরও শক্তিশালী করতে দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা বাাড়নো হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী হবে বা না হবে, সবকিছু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে জাতীয় পার্টি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এজন্য দলটিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক মহল জাতীয় পার্টি দলের কার্যক্রম দলের তৎপরতা বিরোধী দল মন্ত্রিসভা রাজনৈতিক জোট সরকারের অংশিদারিত্ব সাংগঠনিক তৎপরতা