ভারতের ‘ফেলুদা টেস্ট’ বদলে দিতে পারে করোনাভাইরাস পরীক্ষা
৫ অক্টোবর ২০২০ ২২:৪৩
করোনাভাইরাস শনাক্তে ভারতের একদল বিজ্ঞানী এমন এক পরীক্ষা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যাতে কম খরচে ও দ্রুত ফল জানা যাবে। পেপার বা কাগজভিত্তিক এই পরীক্ষা অনেকটা গর্ভধারণ বা প্রেগন্যান্সি টেস্টের মতো। জিন-এডিটিং প্রযুক্তি ‘ক্রিসপার’ এর ওপর ভিত্তি করে উদ্ভাবিত এই পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে বিখ্যাত গোয়েন্দা কাহিনির কাল্পনিক চরিত্র ‘ফেলুদা’র নামে।
‘ফেলুদা’ নামের এই করোনা শনাক্তের কিট বানাতে মাত্র ৫ শ রুপি (সাত ডলারের কম) খরচ পড়বে বলে জানিয়েছে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। আবার মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে এই পরীক্ষার ফল জানা যাবে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী টাটা এই ‘ফেলুদা’ কিট উৎপাদন করবে। এটি হতে পারে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার জন্য বাজারে আসা প্রথম কোনো কাগজভিত্তিক টেস্ট।
‘এটি খুব সহজ, নির্ভরযোগ্য, ব্যাপকভিত্তিতে উৎপাদনযোগ্য এবং কম খরচের একটি টেস্ট’, বলে জানিয়েছেন ভারত সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা অধ্যাপক কে বিজয় রাঘবন।
‘ফেলুদা কিট’ উদ্ভাবনের কাজটি করা হয়েছে দিল্লির সিএসআইআর-ইনস্টিটিউট অব জেনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টেগ্রেটিভ বায়োলজিতে। এর পাশাপাশি কাজ চলেছে কিছু বেসরকারি গবেষণাগারেও।
প্রায় ২ হাজার রোগীর ওপর এই কিট দিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে ছিলেন যাদের ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়েছে।
গবেষকরা দেখেছেন এই নতুন টেস্ট কিটের সংবেদনশীলতা ৯৬ শতাংশ এবং এটির নির্দিষ্টতা ৯৮ শতাংশ। কোন টেস্ট বা পরীক্ষা কতটা নির্ভুল তা মূলত এই দুটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
যে টেস্ট বা পরীক্ষার সংবেদনশীলতা খুব উচ্চ, সেটি যারই এই রোগ আছে তাদের সবাইকে শনাক্ত করতে পারবে। আর যে টেস্ট বা পরীক্ষার নির্দিষ্টতা অনেক বেশি, সেটি যাদের এই রোগ নেই, তাদের বেলায় সেটা বলে দিতে পারবে।
সংবেদনশীলতা এটা নিশ্চিত করবে যে খুব বেশি ‘ফলস নেগেটিভ’ বা ভুল নেগেটিভ রেজাল্ট যেন না আসে। আর দ্বিতীয় যে বিষয়টি, নির্দিষ্টতা, সেটি নিশ্চিত করবে যেন খুব বেশি ‘ফলস পজিটিভ’ বা ভুল পজিটিভ ফল না আসে। ফেলুদা টেস্ট কিট এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তাই ভারতের ঔষধ বিষয়ক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এটি বাণিজ্যিকভিত্তিতে উৎপাদনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে।
ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এখন ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বে সংক্রমণ সংখ্যার দিক থেকে ভারত এখন দ্বিতীয় স্থানে। এ পর্যন্ত ভারতে এক লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে মারা গেছেন।
শুরুতে ভারতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার গতি ছিল বেশ ধীর। তবে এখন দেশজুড়ে বারোশোর বেশি ল্যাবরেটরিতে প্রতিদিন দশ লাখ নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের পরীক্ষা ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রথমটি হচ্ছে পিসিআর (পলিমারেস চেইন রিয়েকশন) সোয়াব টেস্ট। যেটি দীর্ঘকালের পরীক্ষিত এবং মানসম্পন্ন টেস্ট বলে স্বীকৃত। গবেষণাগারে এই পরীক্ষায় রাসায়নিক ব্যবহার করে ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান কয়েক গুণ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ‘অ্যান্টিজেন’ টেস্ট। এটি খুব দ্রুত করা যায়। কোন নমুনায় ভাইরাসের অংশ চিহ্ণিত করার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা হয় অ্যান্টিজেন টেস্টে।
পিসিআর টেস্ট সাধারণত খুবই নির্ভরযোগ্য। ভারতে এই পরীক্ষায় খরচ পড়ে ২ হাজার ৪শ রুপি। এতে ‘ফলস পজিটিভ’ এবং ‘ফলস নেগেটিভ’ ফল কমই আসে।
অন্যদিকে অ্যান্টিজেন টেস্ট তুলনামূলকভাবে সস্তা। পজিটিভ সংক্রমণ ধরার ক্ষেত্রে এটি অনেক বেশি সুচারু। কিন্তু এই পরীক্ষায় অনেক বেশি ‘ফলস নেগেটিভ’ ফল আসে পিসিআর টেস্টের তুলনায়।
গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড হেলথ পলিসির একজন গবেষক ড. অনন্ত ভান বলেন, ‘ভারতে ব্যাপকহারে টেস্ট শুরু হলেও এর মানে এই নয় যে টেস্টিং কিট সহজলভ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখনো টেস্টের জন্য অনেক দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় এবং টেস্টিং কিট পাওয়া যায় না। অনেক বেশি অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। এর ফলে ‘ফলস নেগেটিভ’ রেজাল্ট বেশি আসছে, এটা একটা সমস্যা।’
তিনি বিশ্বাস করেন, ‘ফেলুদা টেস্ট’ এই অ্যান্টিজেন টেস্টের জায়গা নিতে পারে। কারণ এটি দামে অনেক সস্তা এবং অনেক বেশি নির্ভুল।
‘এই নতুন পরীক্ষাটি পিসিআর টেস্টের মতো নির্ভরযোগ্য, এটি অনেক দ্রুত করা যায় এবং ছোট ল্যাবরেটরিতে করা যায়। এটির জন্য অত্যাধুনিক মেশিনের দরকার নেই’, বলছেন আইজিআইবির পরিচালক ড. অনুরাগ আগরওয়াল। সূত্র: বিবিসি, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।