আবরার হত্যার একবছর: চার্জশিট দ্রুত হলেও বিচার কাজে বিলম্ব!
৬ অক্টোবর ২০২০ ০৮:৪৮
ঢাকা: ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার একবছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। হত্যার মামলাটির মাত্র এক মাসের মাথাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আর চার্জশিট দাখিলের এগারো মাস পর শুরু হয় বিচারকাজ। এ সময়ের মধ্যে মামলার বিচারের অগ্রগতি শুধুমাত্র ‘সাক্ষ্যগ্রহণ’ পর্যন্ত এগিয়েছে।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। মামলাটিতে গত ৫ অক্টোবর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা চলবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার এবং শনিবার এবং সরকারি ছুটি বাদে নিয়মিত মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে।
সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা বলেন, ‘মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমরা সেভাবে শুরু করেছিলাম কিন্তু মাঝে করোনাভাইরাসের কারণে আদালত বন্ধ থাকায় কার্যক্রম হয়নি। এখন আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৬০ জন সাক্ষী এবং আসামিও ২৫ জন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো যেন মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হয়।
বুয়েট কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী জানান, করোনার কারণে বিচার কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বিলম্ব হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের হাতে ৮ আসামির দোষ স্বীকারোক্তি জবানবন্দি রয়েছে, যা সব আসামিদের এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মর্মে সম্পৃক্ততা প্রকাশ করেছে। এছাড়াও অনেক ভিডিও ফুটেজ, ডকুমেন্টস রয়েছে যা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার ব্যাপারে যৌক্তিক কারণ হিসেবে কাজ করবে।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘মনে হয় মামলাটা নিয়ে একটু তাড়াহুড়া করা হচ্ছে। ৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর ১৭টি ধার্য তারিখ সাক্ষ্যের জন্য রাখা হয়েছে। বিচার দ্রুত হোক আমরাও চাই। তবে এত দ্রুত নয় যে, যার কারণে আসামিরা প্রস্তুতির অভাবে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।’
নিহতের আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘মহামারি করোনার প্রভাব না পড়লে মামলাটির বিচার এতদিনে শেষ হয়ে যেত। এখন যেন আর বিচারটা বিলম্ব না নয়। আশা করছি দ্রুততার সঙ্গে মামলার বিচার শেষে রায় হবে এবং আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে পরবর্তীতে আর কেউ এমন নৃশংস কাজ করার সাহস পাবে না।’
এর আগে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে ২৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। গত ১৩ জানুয়ারি আবরার হত্যা মামলার নথিটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ পাঠানোর আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগের ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ জন। এছাড়া তদন্তে আরও ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
আবরার হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।
চার্জশিটভুক্ত পলাতক তিন আসামি হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায়, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে বন্ধ ঘরে পিটিয়ে মেরেছেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।