গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যায় সাজা কমিয়ে ৩ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড
৬ অক্টোবর ২০২০ ১১:২৫
ঢাকা: ২০০১ সালে চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
তিন আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে আদালত বলেছেন, ‘যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড।’ আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলো- তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, আজম ও আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীর।
আসামি আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু ও আজমের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন হেলাল উদ্দিন মোল্লা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, ‘২০০১ সালে নাজিরহাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে নিজ বাসভবনে গুলি করে হত্যা করে। এ মামলায় বিচারিক আদালত চার জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর চার জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এরপর হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স শুনানি নিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত চার আসামির মধ্যে একজন মারা যাওয়ায় বাকি তিন জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিলেন। ওই তিন আসামি আপিল দায়ের করলে আপিল বিভাগ আজ তিন জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, এই যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড।’
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান এলাকায় নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল মুহুরীর বাসায় ঢুকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই শিক্ষককে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।
ঘটনার পর ওইদিনই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং খাদ্যমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান মুহুরীর বাসায় যান। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবীণ বিপ্লবী (পরে প্রয়াত) বিনোদ বিহারী চৌধুরীর তোপের মুখে পড়েন এবং দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেন। বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আসার পর উত্তেজিত জনতা দুই মন্ত্রীকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। পরিস্থিতি বেগতিক হলে দুই মন্ত্রীকে অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরায় ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
গুলিবিদ্ধ মুহুরীর বিভৎস ছবি পরদিন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশ-বিদেশে তোলপাড় ওঠে। জামায়াত-শিবিরের দলীয় ক্যাডারেরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে গণমাধ্যমে তথ্য আসে। এই ঘটনায় গোপাল মুহুরীর স্ত্রী রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন অডিট কর্মকর্তা উমা মুহুরী বাদি হয়ে নগরীর কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে মামলাটি নিয়মিত আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে বিচারে গতি আসে।
২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে চার আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ আসে। একই রায়ে আরও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। চারজন খালাস পান।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন- শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নাছির ওরফে গিট্টু নাছির, আজম, আলমগীর কবির ওরফে বাইট্ট্যা আলমগীর ও তছলিমউদ্দিন মন্টু। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল, মো. শাহজাহান, মহিউদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন (পলাতক) ও হাবিব খানকে (পলাতক)। খালাস পান নাজিরহাট কলেজের অধ্যাপক মো. ইদ্রিছ মিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক মো. জহুরুল হক, অধ্যাপক তফাজ্জল আহম্মদ ও দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নাসির।
২০০৪ সালের জুনে নিজ বাসায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন সাইফুল। ২০০৫ সালের মার্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নাছির ওরফে গিট্টু নাছির র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ২০০৬ সালের ১৭, ১৮ ও ১৯ জুলাই হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির ওপর রায় দেন। এতে আজম, আলমগীর কবির ও তছলিমউদ্দিন মন্টুর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। বিচারিক আদালত থেকে খালাস চারজনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন বাদি উমা মুহুরী। সেই আপিল খারিজ হয়েছিল।
২০০৮ সালে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলমগীর আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। অপর দুজন তসলিম উদ্দিন মন্টু ও আজম ২০০৬ সালে জেল পিটিশন করেন। আপিল বিভাগ এসব আপিল খারিজ করে দিয়েছেন।