ঢাকা: এসিআই কোম্পানির স্যাভলন ব্র্যান্ডের হ্যান্ড স্যানিটাইজারে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ও ইথানলের পরিবর্তে মিথাইল অ্যালকোহল বা মিথানলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই মিথানল একদিকে বিষাক্ত, অন্যদিকে ত্বকের জন্য বেশি ক্ষতিকর। তবে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল বা ইথানলের তুলনায় এর দাম কম অনেক কম। ফলে বাড়তি লাভের আশায় এসিআই জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে তাদের স্যানিটাইজারে মিথানল ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
শুধু তাই নয়, স্যাভলন ব্র্যান্ডের এই হ্যান্ড স্যানিটাইজারে উৎপাদনকারী কারখানার যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, বাস্তবে সেখানে এসিআইয়ের কোনো কারখানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্বনামধন্য একটি কোম্পানির এমন প্রতারণায় বিস্মিত র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
গত রোববার (৪ অক্টোবর) জনস্বার্থ বিবেচনায় বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির ১৪টি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করে র্যাব। সেই পরীক্ষাতেই জানা যায়, এসিআইয়ের স্যাভলন ব্র্যান্ডের হ্যান্ড স্যানিটাইজারে রয়েছে বিষাক্ত মিথানলের উপস্থিতি। পরে অভিযান চালিয়ে এসিআইয়ের গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অবস্থিত কারখানাটি সিলগালা করেন দেন র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। কারখানাটিকে ১৭ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
এ প্রসঙ্গে সারওয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, বাজারে বহুল প্রচলিত একটি ব্র্যান্ড এসিআই গ্রাহকের সঙ্গে এত বড় প্রতারণা করবে— এটা কল্পনাও করিনি। সত্যি বলতে আমি নিজেও তাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছি। কিন্তু কখনো ভুলেও ভাবিনি যে তারা এমন প্রতারণা করবে বা করতে পারে।
এসিআইয়ের প্রতারণায় বিস্মিত সারওয়ার আলম আরও বলেন, ১৪টি স্যানিটাইজার পণ্য ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে দুয়েকটিতে ২ থেকে ৪ শতাংশের মতো বিষাক্ত মিথানলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিন্তু এসিআইয়ের স্যাভলন হ্যান্ড স্যানিটাইজারে পুরোটাই মিথানল দিয়ে বানানো। কিন্তু তারা প্যাকেটে উল্লেখ করেছে ইথানল ও আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের কথা। প্রথমে ভেবেছি, ল্যাবে যে পণ্যটি পরীক্ষা করেছি হয়তো সেটিতে ভুলে মিথানল ব্যবহার করা হয়েছে। তাই নিশ্চিত হতে প্যাকেটের গায়ে উল্লেখ করা ঠিকানায় কারখানার খোঁজ করি। কিন্তু বাস্তবে ওই ঠিকানায় কোনো কারখানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এটি অনেক বড় একটি প্রতারণা।
র্যাবের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, মিথানলের দাম ইথানলের পাঁচ ভাগের একভাগ। তাই অতি মুনাফার লোভে তারা মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেখানে তাদের পণ্য ব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষা পাওয়ার কথা, সেখানে এরকম প্রতারণা খুবই দুঃখজনক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে জীবাণুনাশক উপাদান হিসেবে মূলত ব্যবহার করা হয় আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল বা ইথানল। কোনো কোনো স্যানিটাইজারে দু’টিই নির্দিষ্ট মাত্রা ও অনুপাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর কোনোটির বদলে মিথানলের ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ মিথানল পান করলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া ত্বকের জন্যও ইথানল বা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের তুলনায় মিথানল অনেক বেশি ক্ষতিকর।
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফল বলছে, স্যানিটাইজার হিসেবে মিথানল ব্যবহার করলে ত্বকে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি হওয়াসহ আরও নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারে কোনোভাবেই মিথানল ব্যবহার না করার কথা উঠে এসেছে।