মুন্সীগঞ্জের বিরাজ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ
৭ অক্টোবর ২০২০ ০৯:১০
ঢাকা: মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার মহাকালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম বিরাজের বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ জমা দিয়েছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি।
অভিযোগে জানানো হয়, ইউনিয়ন পরিষদের আয়-ব্যয়ের নামে এই অর্থ খাতে-বেখাতে লুটপাট করেছেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান। গত তিন বছরে ইউনিয়ন পরিষদ ২০ লাখ টাকা অভ্যন্তরীণ ও সরকারি বরাদ্দ থেকে ইনকাম করে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওই অর্থ ভাউচার বাদেই খরচ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খরচ দেখানো হয়েছে।
২০১৭ সালে নির্বাচিত হন।ওই ইউপি চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে অর্থলোভী, দুর্নীতিবাজ একজন জনপ্রতিনিধি। কাগজ কলমে উন্নয়ন দেখানো হলেও তিনি বাস্তবে কোনো উন্নয়ন করেননি। এর আগেও তিনি বিএনপি আমলে একবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু ওই সময়েও আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি করায় তিনি জনতার হাতে মারধরের শিকার হন। পরে ঢাকায় গিয়ে থিতু হন ওই ইউপি চেয়ারম্যান। ফের ১৫ বছর পর খোলস পাল্টে তিনি আওয়ামী লীগের সম্মতি পেয়ে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বিরাজ চেয়ারম্যান ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদের আয়-ব্যয় দেখাননি। ওই অর্থবছরের আয়-ব্যয় না দেখিয়ে সেখান থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ সালে আয়-ব্যয় দেখানো হিসাবে গড়মিল উঠে এসেছে। যেখানে অধিকাংশ হিসাবে কোনো ভাউচার নেই। ভাউচার বাদেই নানা খাত-উপখাতে চেয়ারম্যান ও সচিব মোস্তফা যোগসাজশে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ ছাড়া ওই অর্থবছরেও ৫.১২.২০১৮ তারিখে আদায় কমিশনে খরচ বাবদ দেখানো ১৬ হাজার ৫৬৩ এর কোনো ভাউচার পাওয়া যায়নি, ৩০.০১.২০১৯ এর ১৩ হাজার ১৫৫ টাকা আদায় কমিশনের কোনো ভাউচার পাওয়া যায়নি। ২৪.০২.২০১৯ এর মুক্তিযুদ্ধ খাতে ২০ হাজার টাকা খরচের ভাউচার নেই।
এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের আংশিক হিসাবেও গড়মিল পাওয়া গেছে। এই হিসাবে ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরীণ আয় দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৫২৫ টাকা। আর ভুয়া ভাউচারে খরচ করা হয়েছে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৯ টাকা। সব টাকা লুটপাট করে ওই অর্থবছরে অবশিষ্ট দেখানো হয়েছে ১৯ হাজার ৬৮৬ টাকা।
২০১৯ এর জুলাইয়ে আপ্যায়ন দেখানো হয়েছে ৪২০০০ টাকা। খেলাধূলায় ব্যয় দেখানো হয়েছে তিনমাসে ৫৫ হাজার টাকা, জাতীয় দিবস উদযাপনে ব্যয় দেখানো হয়েছে সাড়ে ৪৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারিতে জাতীয় দিবসে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫০০০ টাকা। অথচ জানুয়ারিতে কোনো জাতীয় দিবস নেই।
এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করা ১ শতাংশ এর মোট বরাদ্দ ১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এই টাকা ১১টি প্রকল্পের অনুকূলে ছাড় করা হয়। কিন্তু ১১ টি প্রকল্পে ব্যয় সংক্রান্ত কোনো ভাউচার পাওয়া যাযনি। প্রকল্পের অনুকূলে কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়া হয়নি। যা ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়েল পরিপন্থী। এ ছাড়া রাস্তার কাজ না করেই রহমান এন্টারপ্রাইজের নামে তুলে নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এই টাকা উত্তোলনের বিষয়টি হিসেবে থাকলেও এর কোনো ভাউচার নেই।
এ ছাড়া ২৩.০৬.২০১৯ থেকে ০৭.০৭.২০১৯ পর্যন্ত নিজস্ব রাজস্ব ১টি প্রকল্পের মাস্টাররোল বিল ভাউচার পাওয়া যায়নি যা ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়াল পরিপন্থী। অফিস খরচ ৩০ হাজার টাকার ভাউচার পাওয়া যায়নি যা ইউনিয়ন পরিষদ অপারেশন ম্যানুয়াল পরিপন্থী
দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদের একটি গেটে কেচিগেট লাগানো হয়। যার বাজারমূল্য ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ১৮-১৯ অর্থ বছরে অফিসের আসবাবপত্র কেনার জন্য ১ শতাংশ থেকে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু সেখানে নামমাত্র আসবাবপত্র কিনে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পরের বছরে আসবাবপত্র কেনার জন্য আরও ১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয় অথচ ওই বছরে কোনো আসবাবপত্র কেনা হয়নি।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে কর আদায় করা হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার ১৭০ টাকা। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ কর আদায় কমিশনে ব্যয় হওয়ার কথা ৮৫ হাজার ৬৭৫ টাকা। অথচ কর আদায় কমিশনে মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩২ টাকা। অথচ হিসাব থেকে তিনি ৫৪ হাজার টাকা বেশি ব্যয় দেখিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম বিরাজ বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে আমি তো বাসা থেকে বের হই না। তাহলে আমি দুর্নীতি করলাম কীভাবে?’
হিসাবের এই অসঙ্গতি বেশ পুরনো উল্লেখ করলে ওই চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদকে অভিযোগ দিয়েছে ভালো কথা। আমি যদি অন্যায় করি তাহলে দুদক দেখবে। প্রয়োজন মনে করলে দুদকের লোক আমার কাছে আসবে। আমাকে ডাকলে আমি দুদকের কাছে যাব না।’
এ বিষয়ে দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বকত বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে যায়। এরপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
সচিব আরও বলেন, ‘আপনি যে অভিযোগের কথা বলছেন সে বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
অর্থ লুট ইউনিয়ন পরিষদ দুর্নীতি দমন কমিশন বিরাজ চেয়ারম্যান মুন্সীগঞ্জ