হোয়াইট হাউজে করোনা সংক্রমণের পেছনে যত অনিয়ম
৭ অক্টোবর ২০২০ ১৪:২০
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ হোয়াইট হাউজের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কীভাবে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ হোয়াইট হাউজের শীর্ষ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়লো – সে ব্যাপারে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ওই প্রতিবেদনে করোনা সংক্রমণে আরোপিত চার নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন নিয়ম তারা ভেঙ্গেছেন –
মাস্ক ব্যবহার করা
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মার্কিন সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণ জমায়েত হয় এমন স্থানে মাস্ক ব্যবহার সবার জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু, হোয়াইট হাউজে মাস্ক ব্যবহারের বিধিনিষেধ ‘থোড়াই কেয়ার’ করা হয়েছে।
সম্প্রতি চিকিৎসা নিয়ে ওয়ালটার রিড হাসপাতাল থেকে হোয়াইট হাউজে ফিরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জনসম্মুখেই মাস্ক খুলে ফেলতে দেখা গেছে। যদিও, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এখনও করোনা ছড়াতে সক্ষম এমন ধাপে রয়েছেন।
শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা
সিডিসি’র পক্ষ থেকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে যেসকল নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম – যে কোনো আয়োজনে একজন থেকে আরেকজন যেনো অন্তত ছয় ফুট দূরত্বে অবস্থান করতে পারেন তা নিশ্চিত করা এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গণ জমায়েত না করা।
কিন্তু, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে অ্যামি কোনি ব্যারেটকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য হোয়াইট হাউজে যে আয়োজন করা হয়েছিল। ওই আয়োজনকেই ‘সুপার স্প্রেডার ইভেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও, ওয়াশিংটন ডিসি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ জনের বেশি জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছিল। তবে, হোয়াইট হাউজের ওই আয়োজনে উপস্থিতি ছিল তার অনেক বেশি এবং সেখানে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি।
ওই আয়োজন থেকেই অন্তত দশজন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ওই আয়োজনের পরই করোনা উপসর্গে ভোগা শুরু করেছেন।
সেলফ আইসোলেশন
সিডিসি’র নির্দেশনা অনুসারে যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন তবে তিনি সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলে সেলফ আইসোলশনে থাকবেন অন্তত দুই সপ্তাহ।
কিন্তু, গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা দেখেছি যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা আক্রান্ত হয়ে ওয়ালটার রিড হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একদিনের মাথায়ই হাসপাতালের বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের জন্য ‘সারপ্রাইজ’ হিসেবে এক মোটর শোভাযাত্রায় অংশ নিলেন। যে কারণে তার সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং অপর কয়েকজন সঙ্গী করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
কনট্যাক্ট ট্রেসিং
সিডিসি’র নির্দেশনা অনুসারে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের একটি সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করে তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
কিন্তু, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ এর প্রথম নির্বাচনি বিতর্কদের দিন ডেমোক্রেট শিবিরের কাউকে জানানোই হয়নি যে করোনা পরীক্ষার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের নমুনা জমা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, হোয়াইট হাউজের প্রেসপুলের একজন সদস্য করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পরও, তার কাছ থেকে সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোনো তালিকা চাওয়া হয়নি।
এমনকি, ট্রাম্প ন্যাশনাল গলফ ক্লাবে রিপাবলিকান পার্টি এবং ট্রাম্পের শীর্ষ সমর্থকদের এক গোপনসভা অনুষ্ঠিত হয়, সেই আয়োজনে করোনা আক্রান্ত ট্রাম্পের সংস্পর্শে আসাদের কোনো তালিকা করতে পারেনি হোয়াইট হাউজ।
কোভিড-১৯ ডোনাল্ড ট্রাম্প নভেল করোনাভাইরাস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)