Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কর্ণফুলীর ওপর রেল-সড়ক সেতু হবে, ২০২১ সালে কাজ শুরুর ঘোষণা


৭ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৫৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর সড়কসহ রেলসেতু নির্মাণের কাজ ২০২১ সালের প্রথমদিকে শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।

বুধবার (৭ অক্টোবর) সকালে কালুরঘাটে সেতু নির্মাণের স্থান পরিদর্শন শেষে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক পথসভায় রেলমন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছেন।

এসময় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনদাবির প্রতি সম্মান ও সমর্থন জানিয়ে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ আগামী বছরের শুরুতে শুরু হবে। দুই লেনের সড়ক এবং রেল সংযোগ নিয়ে একটি কম্বাইন্ড সেতু নির্মাণ করা হবে।’

বিদ্যমান কালুরঘাট রেলসেতুর বোয়ালখালী প্রান্তে আয়োজিত এ পথসভায় মন্ত্রী বলেন, ‘সেতুটি আগেই নির্মাণ করা যেত। ভুল বোঝাবোঝির কারণে সেতু নিমাণে দেরি হয়েছে। এখন সড়ক কাম রেল সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট অনুশাসন পাওয়া গেছে। ফলে সেতু নির্মাণে সকল মতভিন্নতা দুর হয়েছে। কোরিয়ান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)-এর সঙ্গে অর্থায়নে বিষয়ে আলোচনা চলছে। সবকিছু ঠিক করা হয়েছে।’

‘সেতু নির্মাণের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে, স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি রেল সংযোগ স্থাপনের জন্য এ সেতু খুবই জরুরি। ২০২২ সালের মধ্যে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন চালু হয়ে যাবে। এই সময়সীমার মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজও শেষ করা হবে। রেল সংযোগের পাশাপাশি এ সেতু বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে আন্তঃসড়ক সংযোগ সৃষ্টি করবে। এর ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উম্মোচন হবে।’

বিজ্ঞাপন

সভায় জানানো হয়েছে, কালুরঘাটে বিদ্যমান সেতুর ৮০ মিটার উত্তরে উত্তরে এ সেতুর স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ৯টি স্প্যান দিয়ে সেতু নির্মাণের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চতা থাকবে।

এতে আরও বলা হয়, সেতু নির্মিত হলে নিরবচ্ছিন্ন রেল পরিবহন সেবা নিশ্চিত করা যাবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার করিডোরের অপারেশনাল প্রতিবন্ধকতা দুর হবে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য বৃহত্তর করিডোর তৈরি হবে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের যানজট হ্রাস পাবে। আঞ্চলিক বিনিময় সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান আরো উন্নত হবে।

পথসভায় বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান, বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রণব কুমার ঘোষ, বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুনসহ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

ব্রিটিশ আমলে ১৯৩০ সালে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেলসেতু। ১৯৫৮ সালে সেতুটি সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। ৯০ বছর বয়সী সেতুটি এখন অনেকটাই ভাঙাচোরা আর জোড়াতালি দেওয়া। প্রতিদিন এই জীর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে চলছে ট্রেন ও যানবাহন। চট্টগ্রাম নগরীর থেকে বোয়ালখালী উপজেলা এবং পটিয়া উপজেলার তিন ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের জন্য এটিই একমাত্র সেতু। আর দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী ট্রেন চলাচলের জন্যও এটিই একমাত্র সেতু।

বিজ্ঞাপন

বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদসহ স্থানীয় জনসাধারণ সেতুর দাবিতে প্রায় দেড় দশক ধরে আন্দোলন করে আসছে। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনও সেতুর দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে।

প্রথমে সড়কসহ রেলসেতু নির্মাণের জন্য সমীক্ষা হলেও পরে দ্বিমুখী রেলসেতু করার উদ্যোগ নিয়ে এগোয় রেল মন্ত্রণালয়। বারবার আশ্বাসের পরও সেতু বাস্তবায়ন করাতে না পেরে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও-মোহরা) এলাকার সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদল ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। অন্যথায় সংসদ থেকে পদত্যাগেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক ২০১৯ সালের নভেম্বরে মারা যান। এরপর নির্বাচিত সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

কর্ণফুলি ব্রিজ রেলমন্ত্রী সেতু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর