Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ঢাকার মানবিক দিকগুলো ভুলে গেলে চলবে না’


৭ অক্টোবর ২০২০ ২৩:৪৬

ঢাকা: “আমরা বিপুল বিক্রমে ঢাকাকে গালি দিয়ে চলেছি। শুধু গালি দিলে চলবে না, ঢাকার মানবিক দিকগুলোও ভুলে গেলে চলবে না। ‘ঢাকা’ এখনো সিরাজগঞ্জের নদীভাঙা মানুষটিকে বলে, আয়, আমার বুকে আয়। আর কিছু না হোক, রিকশা চালা। আমি তোকে খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখব এবং রাখেও। দিনের পর দিন যে মা অন্ন দেয়, দিন শেষে সেই মাকেই আবার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, তাকে অস্বীকার করি— এটা ভালো কথা নয়।”

বুধবার (৭ অক্টোবর) রাতে ‘২০৫০ সালের জনবসতি, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক অনলাইন সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট’ ও ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স’ যৌথভাবে ভার্চুয়াল এ সভা আয়োজন করে।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সম্পাদক স্থপতি তৌফিকুর রহমান খানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সেলিম রায়হান, পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আমিনুল এহসান, আদিল মুহাম্মদ খান ও স্থপতি ইকবাল হাবিব।

ইকবাল হাবিব বলেন, ‘নগরায়ন নিয়ে খোলা মনে আলোচনা না হওয়ার কারণে আমাদের মধ্যে একপেশে চিন্তা, একপেশে ধারাণা তৈরি হয়েছে। এর ফলে এর পুরোটা অ্যাডভান্টেজ, পুরোটা লাভ গ্রহণ করছে বাণিজ্যিক মানসিকতার ব্যবসায়ীরা, যারা আমাদের সংসদের ৬৫ ভাগ সিট দখল করে আছেন।’

তিনি বলেন, ‘জনবান্ধব জনবসতি গড়ার স্থাপত্য পরিকল্পনার মূল জায়গাটা আমরা অনেক স্থপতি, নগরবিদ, নগরপরিকল্পনাবিদ নিজ নিজ জায়গা থেকে বুঝতে ভুল করি। আমরা এটা ভুলে যাই— আমার একলার চিন্তাই এই নগরের চিন্তা। আমি মনে করলাম এই নগরীতে হাইরাইজ হবে না, তাহলে হাইরাইজ হবে না। প্রত্যেকটা বিষয়ের একটা সৌকর্য আছে, সীমাবদ্ধতা আছে, নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে, আবার অনুকরণেরও প্রয়োজনীয়তা আছে। এই যে বিষয়টা, এর জন্য দরকার পরস্পর সম্পর্কযুক্ততার মিথস্ক্রিয়া। এটির প্রচণ্ড অভাব গত ২০ বছর ধরে লক্ষ করেছি।’

ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা বিপুল বিক্রমে ঢাকাকে গাল দিয়ে চলেছি। একবার চশমাটা খুলে নতুন একটা চশমা পরেন। মনে করেন, ঢাকাটা একটা স্টেইট। এর মধ্যে অনেকগুলো ছোট ছোট শহর। মিরপুর একটা শহর, উত্তরা একটা শহর, ভবিষ্যতে পূর্বাচল একটা শহর হবে এবং পুরান ঢাকার একেকটা অঞ্চল একেকটা শহর হতে পারে। আসল জায়গাটা হচ্ছে এর অন্তর্বর্তিতা, এর মানবিকতা, সমতার ভিত্তিতে বিন্যাস— এই জায়গাগুলো বার বার চলে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্র থেকে আরেকটি স্বৈরতন্ত্রে গেলাম, অথবা যেতে বাধ্য হলাম। যার ফলে ঢাকা হয়ে গেল সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য— এই অভিমুখতা ক্রমাগত ঢাকাকে প্রলম্বিত করেছে, প্রসারিত করেছে। এখনো ঢাকা সিরাজগঞ্জের নদীভাঙা মানুষটিকে বলে, আমার বুকে আয়। আর কিছু না হয় রিকশা চালা। আমি খাইয়ে পরিয়ে রাখব এবং রাখেও। সুতরাং মানবিক ঢাকার জায়গাগুলো ভুলে গেলে চলবে না।’

অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘উন্নয়নের একটি অসম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নগরায়ন— এতে কোনো সন্দেহ নেই। অর্থনীতিবিদদের পারসপেক্টিভ থেকে আমরা যখন নগরায়নের কথা বলি, তখন বিষয়টিকে আমরা কিভাবে দেখি? বেসিক্যালি নগরায়ন নিয়ে আমাদের সাধারণ ধারণা হলো গ্রাম থেকে শহরে সাধারণ মানুষের বড় ধরনের একটা মাইগ্রেশন। শহর বলতে যেটা বুঝি, যেখানে নানা ধরনের শিল্প-খারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য— এগুলোকে কেন্দ্র করে এক ধরনের আবাস এবং তার সঙ্গে সম্পৃক্ত যে পরিষেবাগুলো গড়ে ওঠে, সে সবকিছু মিলে এক ধরনের নগরভিত্তিক ব্যবস্থাপনা।’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের নগরায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ করে গ্রাম থেকে শহরে যে বড় ধরনের একটা ট্রানজিশন, তাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অর্থনৈতিক কাঠামোগত পরিবর্তন। এটার সাথে নগরায়ন খুব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে একটা দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনটার মিল খুঁজে পাওয়া যায়।’

সেলিম রায়হান বলেন, ‘উন্ননশীল দেশ ও উন্নত দেশে নগরায়নের যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে, আমরা তার কতটুকু প্রতিফলন দেখতে পাই? বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কাঠামো যে পরিবর্তন হয়েছে গত কয়েক দশকে, তার সঙ্গে কিন্তু বড় ধরনের একটা সম্পর্ক রয়েছে নগরায়নের। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের কারণে আমাদের দেশের অর্থনীতির ধংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়েছিল। সেখান থেকে আজকের বাংলাদেশে অনেক সূচকে শক্ত জায়গায় দাঁড়িয়েছে।’

‘কিন্তু এই যে অগ্রগতি যথার্থ কি না, যথেষ্ট কি না? যখন আমরা সামনের দিনগুলোর কথা ভাবছি, অর্থাৎ ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি, নগরায়নের কী পরিস্থিতি হবে সবকিছু মিলে? তাতে কি আমরা রাইট ডিরেকশনে যাচ্ছি? দ্যাট ইজ আ বিগ কোশ্চেন। আমরা কোন ডিরেকশনে যাচ্ছি, সেটা বোঝার জন্য আমরা কোন ডিরেকশনে আছি, সেটা বোঝার প্রেয়োজন আছে,’— বলেন সেলিম রায়হান।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দিকগুলোর দিকে তাকাই, তখন দেখা যায় একটা শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির দিকে আমরা যাচ্ছি। গত কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধির হার যেটা আমরা দেখছি, এটা কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে একদম প্রথম কাতারে। সুতরাং অর্থনীতির দিক থেকে বাংলাদেশ সামনের সারিতে আছে। আবার বেশকিছু সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ সামনের সারিতে আছে। এগুলো ধরে রাখতে হবে।’

অধ্যাপক সেলিম রায়হান ইকবাল হাবিব নগরায়ন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট রাজধানী ঢাকা স্থাপত্য


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর