মানবিক আমজাদের পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী
৮ অক্টোবর ২০২০ ০১:০০
ঢাকা: মানসিক এক প্রতিবন্ধী তরুণী ছিলেন অন্তঃস্বত্ত্বা। তার দেখাশোনার কেউ নেই। সেই তরুণীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক চাষি আমজাদ আলী। নিজের সহায়-সম্বল বলতে তেমন কিছু না থাকলেও মানবিকতার অনন্য নজির গড়ে ওই প্রতিবন্ধী তরুণীর জন্য যা কিছু প্রয়োজন, চেষ্টা করেছেন যথাসাধ্য পূরণের।
আমজাদের এমন মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের খবর জানতে পেরে এবার তার ও ওই প্রতিবন্ধী তরুণীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই নির্দেশে ওই তরুণীকে ভর্তি করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, যেখানে গত ২ অক্টোবর কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেসউইং থেকে জানানো হয়েছে, প্রসূতি ও নবজাতকের দেখভালের জন্য নগদ অর্থ সহায়তাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি আমজাদ আলীকে কিনে দিয়েছেন একটি মোটরচালিত ভ্যান।
জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার কোলাবাজারে পথের ধারে পড়ে ছিলেন গর্ভবতী ওই তরুণী। তিনি একে মানসিক প্রতিবন্ধী, তার ওপর ছিলেন অসুস্থ। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে মায়াধরপুরে নিজের বাড়ি নিয়ে যান আমজাদ আলী। তিনি কৃষক হলেও তার নিজের জমি নেই। সারাবছর অন্যের ক্ষেত্রে কামলা দিয়ে সংসার চালান। দুই ছেলেমেয়ের জনক আমজাদ মেয়েটির বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করলেও সড়ক দুর্ঘটনায় গত ছয় মাস ধরে শয্যাশায়ী।
নিজের এমন অনটনের মধ্যেও প্রতিবন্ধী তরুণীটির পাশে দাঁড়ান আমজাদ। তার একার রোজগারে যখন সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে, তার মধ্যেও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন ওই তরুণীর জন্য চিকিৎসা ও পথ্যের ব্যবস্থা করতে।
গণমাধ্যমে আমজাদকে নিয়ে খবর প্রকাশিত হলে তা দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রীর। তিনি নির্দেশ দেন, প্রতিবন্ধী তরুণীকে যেন দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়। সে অনুযায়ী তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পর ২ অক্টোবর একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ওই প্রতিবন্ধী তরুণী। মা ও মেয়ে উভয়েই সুস্থ আছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেসউইং থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিবন্ধী প্রসূতির জন্য ‘প্রতিবন্ধী কার্ড’ করে দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি এখন থেকে নিয়মিত ভাতা পাবেন। এছাড়া প্রসূতি ও নবজাতকের দেখাশোনার জন্য আমজাদকে দেওয়া হয়েছে নগদ ৫৫ হাজার টাকা। আর আমজাদ আলীর ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে একটি মোটরচালিত রিকশাভ্যান দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। বুধবার (৭ অক্টোবর) সেই রিকশাভ্যানটি হাতে পেয়েছেন আমজাদ। কেবল মানবিকতার খাতিরে অসহায় এক তরুণীর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিদান এভাবে হাতেনাতে পাবেন— সেটা বিশ্বাসই করতে পারছেন না এখনো।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রতিবন্ধী কার্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তিক চাষি আমজাদ আলী