Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলবায়ু ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ৪ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর


৮ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪১

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাঁচাতে বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, জলবায়ু ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন তিনি।

তার সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জনগণের ভবিষ্যতের সুরক্ষা ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে জাতীয় ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ নামে একটি নতুন কর্মসূচি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের এও নিশ্চিত করা উচিত যে প্রশমন, অভিযোজন ও দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধারের জন্য বছরে অন্তত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যেন উন্নয়নশীল দেশগুলো পেতে পারে।

বুধবার (৭ অক্টোবর) ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ)’ আয়োজনে ‘মিডনাইট সার্ভাইভাল ডেডলাইন ফর দ্য ক্লাইমেট’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে বর্তমান সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষায় শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের জন্য চার দফা প্রস্তাবও উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রস্তাবনাগুলো ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বর্তমান হারকে হ্রাস করার একমাত্র উপায়। তাই প্রথমত, এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্যারিস চুক্তির আওতায় সরকারগুলোকে তাদের জাতীয় অবদানকেই কেবল সম্মান জানানো উচিত নয়, তাদের আকাঙ্ক্ষাও যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার। জলবায়ু ন্যায় বিচারের ধারণাটি জলবায়ু ও পৃথিবীর স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার তৃতীয় ও চতুর্থ প্রস্তাবে বলেন, প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি এমডিবি ও আইএফআইসহ বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে (উন্নত দেশগুলো) অর্থের আরও জোরদার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আর চতুর্থত, লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিকে চিহ্নিত করতে এবং মূলধারায় আনতে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।

পরিবর্তনের বিষয়টি সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে আমরা কেবল হেরে যাব। আমাদের সব কর্মকাণ্ড এটাই প্রকাশ করে যে আমরা সচেতনভাবে জরুরি সহযোগিতার মাধ্যমগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছি, যা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। কাজেই পৃথিবীকে বাঁচাতে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় আজই, আগামীকাল নয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আমাদের সভ্যতার ক্ষতি করছে, আমাদের গ্রহকে ধ্বংস করছে এবং আমাদের অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের (জিসিএ) সভাপতি বান কি মুন এবং সিভিএফের সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরামের নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হয়ে সম্মানিত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সিভিএফ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ১ বিলিয়নেরও বেশি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে অনুল্লেখযোগ্য অবদানের পরও এই দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও সভাপতি হিসাবে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। অর্থায়ন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করা এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার আখ্যানগুলো এবং ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতি ইস্যু তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য হবে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়ে জাতিসংঘে বিশেষ ‘র‌্যাপোর্টিয়ার’ নিয়োগ এবং একটি সিভিএফ ও ভি ২০ যৌথ মাল্টি-ডোনার তহবিল গঠনের ওপরও গুরুত্ব দেবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যাডাপটেশনের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয় খুলেছে। এটি বাংলাদেশের সভাপতির সচিবালয় হিসেবে কাজ করবে এবং এই অঞ্চলে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে দক্ষিণ এশিয়ায় যথাযথ পদক্ষেপে সহায়তা, সাহায্য ওবিকাশ ঘটাবে।

জার্মান ওয়াচের জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি সূচক ২০১৯-এর তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে। এসময় তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে কক্সবাজার এলাকার মারাত্মক সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টিও তলে ধরেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো কাজ করলেও এ ক্ষেত্রে উন্নত, তথা বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর ভূমিকা আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিশ্ব প্যারিস চুক্তির ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এটা সীমানা পেরিয়ে যাওয়ার শেষ সীমা এবং জি-২০ দেশগুলো থেকে যেগুলোর নিঃসৃত কার্বনের পরিমাণ তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি। আমরা তাদের নির্গমনকে কার্যকরভাবে হ্রাস করার জন্য সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট এনডিসি আশা করি। কারণ তাপমাত্রা বাড়লে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অধিকাংশ দ্বীপ ও সমুদ্র তীরবর্তী রাষ্ট্র পানির নিচে চলে যাবে। ফলে কোটি কোটি মানুষ জলবায়ু শরণার্থী হয়ে পড়বে এবং এদেরকে আশ্রয় দেওয়ার সামর্থ্য বিশ্বের নেই।

“এটি উপলব্ধি করে, বাংলাদেশ সংসদ একটি ‘প্ল্যানেটারি জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধে যুদ্ধের সময়ের মতো করে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। কপ ২৬ স্থগিতাদেশে, আমাদের বর্ধিত এনডিসিগুলো ঘোষণা করার সময় এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে। এটি কার্যত আমাদের ‘বেঁচে থাকার সময়সীমা’,”— বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের পাশাপাশি সম্মেলন করে আমরাও ধরিত্রী মাতার সঙ্গে আমাদের সম্প্রীতি সুরক্ষার জন্য একটি আন্তর্জাতিক দিবসকে ‘জলবায়ু রেজিলিয়েন্স ডে’ নামকরণের আহ্বান জানাচ্ছি। বাসস।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যাডাপটেশন জলবায়ু ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা জলবায়ু পরিবর্তন জলবায়ু রেজিলিয়েন্স ডে টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্ল্যানেটারি জরুরি অবস্থা মিডনাইট সার্ভাইভাল ডেডলাইন ফর দ্য ক্লাইমেট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর