Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এসএমই খাতে প্রণোদনার অর্থছাড়ে গড়িমসি


৮ অক্টোবর ২০২০ ০৮:১৯

ঢাকা: করোনাকালীন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ১৯টি প্যাকেজের আওতায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে বেশ সক্রিয় থাকলেও ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএমএসএমই) এবং প্রাক-জাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচিতে ঋণ বিতরণে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। ফলে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পেয়ে ক্ষুদ্র উদ্যেক্তারা ব্যাংকগুলোর কাছে ধরনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের জন্য ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ১০৩ কোটি টাকা, যা মোট প্রণোদনা প্যাকেজের মাত্র ২০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই খাত থেকে সারাদেশে ১১ হাজার ১৮৩টি প্রতিষ্ঠান ঋণ পেয়েছে।

বিএমএসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নোটিশ দিয়ে তাগাদা দেওয়া হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে ন। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এই খাতে পুরো ঋণ বিতরণের জন্য চলতি অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। তবে গত পাঁচ মাসে যেখানে মাত্র ২০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, সেখানে চলতি মাসের শেষ তিন সপ্তাহে কিভাবে বাকি ৮০ শতাংশ ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দিহান উদ্যোক্তারা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ দ্রুত ছাড় দেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ব্যাংকগুলোকে মনিটরিং করছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সন্তোষজনক ঋণ বিতরণ করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে এসএমই খাত।

এই খাতেও ঋণ বিতরণে গতি আনতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যে এসএমই খাতের ঋণ বিতরণ সম্পন্ন করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই খাতে ঋণ বিতরণে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান সারাবাংলাকে বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক যথেষ্ট আন্তরিক। তবে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করতে হয়। আর তা করতে গিয়ে কিছুটা সময় লাগছে। তারপরও এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের গতি বাড়াতে সোনালী ব্যাংক সক্রিয় রয়েছে।

সূত্র জানায়, করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই খাত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। এই তহবিলের অর্ধেক অর্থের জোগান দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ঋণের বড় সুবিধাটি হলো— এর সুদ হবে বার্ষিক ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সুদের ৪ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করবে ঋণগ্রহীতা, আর বাকি ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তারা বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা নিয়ম-নীতির দোহাই দিয়ে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। অনেক শাখায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত প্যাকেজের নীতিমালার কপিই পৌঁছেনি।আবার কোনো কোনো ব্যাংকের শাখা প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণের ব্যাপারে কিছুই জানে না। ফলে ব্যাংকের শাখাগুলো প্রণোদনার আওতায় ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করছে।

এ বিষয়ে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির সভাপতি মির্জা নূরুল গনি শোভন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো প্রণোদনার অর্থ ছাড় দিতে নানা ধরনের গড়িমসি করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার নির্দেশ দিলেও ব্যাংকের শাখাগুলো তাতে সাড়া দিচ্ছে না। ব্যাংকের অসহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে গত পাঁচ মাসে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে।

সূত্র জানায়, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার মোট ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, যার অধিকাংশই ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আটটি প্যাকেজের আওতায় ৭৮ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হবে। এর মধ্যে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের আকার ১২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। বাকি ছয়টি প্যাকেজের আওতায় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ঋণ আকারে প্রণোদনা বিতরণ করা হবে ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে পুনঃঅর্থায়ন হিসেবে ৩৩ হাজার কোটি টাকা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর সরকার দেবে ৫ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে প্রণোদনা সুবিধা দিতে ব্যাংকগুলো যেন তারল্য সংকটে না পড়ে, সে জন্য ৫১ হাজার কোটি টাকার তহবিল দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে দুই দফায় সিআরআর দেড় শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলোর ১৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বেড়েছে।

এসএমআই করোনা গড়িমসি প্রণোদনা

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর