‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিও জয় করে আমরা এগিয়ে যাব’
৮ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৫৩
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা করোনাভাইরাস পরিস্থিতিও জয় করে এগিয়ে যাব এবং বাংলাদেশ যেমন একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে, যেকোনো সমস্যা আসুক, সেটা প্রাকৃতিক সমস্যা হোক বা মনুষ্য সৃষ্ট সমস্যা হোক, আমরা সেগুলি অতিক্রম করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।’
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অল ওয়েদার সড়কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গণভবন প্রান্তে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। শুরুতে উদ্বোধনকৃত প্রকল্পের ওপর ভিডিওচিত্র ও সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম।
এছাড়া গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মিঠামইন প্রান্ত থেকে মোনাজত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা ইয়াকুব আলী।
ঢাকার গণভবন থেকে মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মিলনায়তনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। মিঠামইন প্রান্তে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, স্থানীয় নেতা ও কয়েকজন স্থানীয় উপকারভোগী মতবিনিময় করেন। এছাড়া প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় নেতা ও বিভিন্ন উপকারভোগীর কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে। কারণ তিনি যদি উদ্যোগ না নিতেন আর আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করতেন তাহলে হয়ত এই রাস্তাটা করা সম্ভব হত কি না সন্দেহ। তারি আগ্রহে এবং উদ্যোগে এই সড়কটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রামের মানুষ বর্ষাকালে যখন থাকে তখন পানি নৌকায় যাতায়ত করত, কিন্তু শুকনা মৌসুমে যাতায়াতের সুযোগ সুবিধা তেমন ছিল না, পায়ে হাঁটা ছাড়া। সেজন্য এলাকায় একটা কথা প্রচলিতই ছিল বর্ষায় নাও শুকনায় পাও। আজকে আর সেটা না, এখন আর দুই পায়ে হাঁটতে হবে না। এখন গাড়ি ঘোড়া সবই চলবে, সেই ব্যবস্থাটা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ভাটি অঞ্চলের মানুষের নেতা আবদুল হামিদের কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি এই উদ্যোগটা না নিতেন আর বারবার আমাদেরকে না বলতেন তাহলে তো এই অঞ্চলে যে এরকমভাবে রাস্তা করা যায়, এটা চিন্তারই বাইরে ছিল। আজকে যে তার অনুপ্রেরণা এবং তারি উদ্যোগে এই রাস্তাটি আমরা করতে পেরেছি। জানি যে, এই অঞ্চলের মানুষের এখন আর সেই আগের মত দুঃখ থাকবে না। তাছাড়া নাসিরনগরের সঙ্গেও একটা সংযোগ হয়ে যাচ্ছে। ওই নাসিরনগর হয়েও দ্রুত ঢাকা শহর চলে আসা যাবে। আবার ভৈরব হয়েও আসা যাবে মানে সবদিক দিয়ে একটা চমৎকার যোগাযোগের ব্যবস্থা আমরা করে দিতে পেরেছি। আমি আশা করি এই ইটনা, মিটামইন এবং অষ্টগ্রামের মানুষ তারা আগে যে কষ্টটা ভোগ করতেন, সেটা আর ভোগ করবেন না।’
তাছাড়া অষ্টগ্রামের পনির এটা তো আন্তর্জাতিক মানের। সেখানে আন্তর্জাতিক মানের পনির তৈরি হয়, কিন্তু বাজারজাত করা অসুবিধা ছিল বলে সেটা খুব ভালোভাবে কার্যকর হয়নি, এবার যেহেতু রাস্তা হয়ে গেছে এখন আমি মনে করি অষ্টগ্রামের পনির উৎপাদিত হয়ে ঢাকা শহরে শুধু না আমরা বিদেশেও পাঠাতে পারব, সেভাবে সুযোগটা থাকবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটা উপজেলায় কিন্তু এক একটা বৈশিষ্ট্য আছে। এক একটা পণ্য বিশেষভাবে উৎপাদিত হয়, উৎপাদিত পণ্য যেন বাজারজাত হয় যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তারা যেন ন্যায্য মূল্য পায়, আমরা সেই ব্যবস্থাটাই করতে চাই।
অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে এই অঞ্চলের মানুষ যেন আরও উন্নত হয়, সমৃদ্ধশালী হয় সেটাই করতে চাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে বলেন, ‘আমরা সারাবাংলাদেশ সড়কের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি। যোগাযোগ ব্যবস্থায় নৌপথগুলি সচল করা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। রেলপথ সংযোগ আবার পুনরায় স্থাপন করে নতুন নতুন রেল লাইনের সম্প্রসারণ করে রেলের যোগাযোগটা বাড়াচ্ছি। নৌপথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছি, সড়ক পথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছি। এতে করে মানুষের যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে, মানুষের পণ্য পরিবহনের সুবিধা হবে, সেখানে মানুষের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বিতা ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশ হবে জাতির পিতা স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। আমরা সেইভাবেই বাংলাদেশকে গড়তে চাই এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে আমাদের এটাই লক্ষ্য যে মুজিববর্ষে আমরা এদেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর করে, এদেশের মানুষকে আমরা একটা সুন্দর জীবন দিতে চাই।’
‘হয়ত আমরা আরও অনেক দূর উন্নতি করতে পারতাম। কিন্তু করোনাভাইরাস আমাদেরকে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এটা শুধু বাংলাদেশ না, আজ বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি স্থবির। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে আমাদের ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। কলেজে যেতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। তাদের পড়াশোনা ক্ষতিগস্থ হচ্ছে। তারপরও আমরা চাচ্ছি, তাদের পড়াশোনাটা যাতে চলমান থাকে। সেইজন্য পরীক্ষা যেহেতু আমরা এইচএসসি বা এসএসসি পরীক্ষা নিতে পারছি না কিন্তু তাদের যে টেস্ট পরীক্ষা বা ক্লাসের পরীক্ষাগুলি নিয়ে তাদের রেজাল্ট দিয়ে ইতোমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের প্রমোশনটা দিয়ে দেওয়া হবে, তারা যে পড়াশোনাটা অব্যাহত রাখতে পারে।’
পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলাসহ খোলা বাতাস রোদে ঘোরাফেরা করার দিকেও খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাতে এই করোনাভাইরাসে আর যেন আমাদের দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। আমরা এটাও জয় করে এগিয়ে যাবো এবং বাংলাদেশ যেমন একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে, যেকোন সমস্যা আসুক, সেটা প্রাকৃতিক সমস্যা হোক বা মনুষ্য সৃষ্ট সমস্যা হোক, আমরা সেগুলি অতিক্রম করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।’
আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের জন্য কাজ করা এবং জনগণের কল্যাণ করা, আমরা সেটাই করে যাচ্ছি, বলে উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নিশ্চিত করা বলে তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শিল্প অঞ্চল গড়ে তুলছি। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। যে অঞ্চলে যে পণ্যটা উৎপাদিত হয় তার ভিত্তিতে যেন শিল্প গড়ে ওঠে সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি। যেহেতু হাওর অঞ্চল। হাওরে বিশাল মৎস্য ভাণ্ডার আছে। সেই মৎস্য উত্তলন, মৎস্য চাষ, প্রক্রিয়াজাত করা বাজারজাত করার যাতে সুবিধা হয় সেভাবে শিল্প গড়ে তুলতে চাই। খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প, কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প, যাতে কৃষির ওপর নির্ভরশীল অঞ্চলগুলি তারা শুধু কৃষির ওপর নির্ভরশীল থাকবে না তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রক্রিয়াজাত হবে, বাজারজাত হবে দেশে-বিদেশে রফতানি করা যাবে। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা আসবে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা আরও অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
শীতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্তুতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শীতের সময় করোনাভাইরাস আসে। আগামী শীতকালে আবার আসতে পারে, সেটা মাথায় রেখে প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নির্মাণ থেকে শুরু করে অক্সিজেনের ব্যবস্থা এবং সব ধরণের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। তাছাড়া আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ২ হাজার ডাক্তার ৩ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি, টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি, আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি।‘
তিনি বলেন, ‘হাওড় অঞ্চলে যেমন কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা এসমস্ত অঞ্চলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল না। আমরা বিশ্ববিদ্যাল নির্মাণ করে দিচ্ছি। প্রত্যেকটা বড় জেলায় একটা করে বিশ্ববিদ্যালয় হোক, সেটা আমরা চাই। যেন ছেলে মেয়েরা ঘরের ভাত খেয়ে বাড়ির কাছে থেকে উচ্চ শিক্ষা পেতে পারে সেই ব্যবস্থাটা দিচ্ছি।’