স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দাবি বাম সংগঠনগুলোর
৯ অক্টোবর ২০২০ ২১:৫০
ঢাকা: সারাদেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে বামধারার সংগঠনগুলো। শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মহাসমাবেশ থেকে নয় দফা দাবি তুলে ধরেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স। বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন ও উদিচী শিল্পগোষ্ঠী এই সমাবেশে অংশ নেয়।
বামদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। এছাড়া ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে।
পাহাড়ে- সমতলে নারীদের উপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা; হাইকোর্টের নির্দেশনানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সরকারি, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর, সিডও সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে।
ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞানে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ, পর্নোগ্রাফি নিযন্ত্রণে বিটিসিএল এর কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে; তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও জানান তারা।
পাশাপাশি অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে অন্তর্ভুক্ত করা, ট্রাইবুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করা; ধর্ষন মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭৯-১৫৫ (৪) ধারাকে বিলোপ করা এবং মামলার ডিএনএ আইনে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করা; পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার; গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে হবে বলেও উল্লেখ করেন নেতারা।
এছাড়া মহাসমাবেশ থেকে প্রতিবাদি কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়। কর্মসূচিগুলো হলো- আগামী ১১ অক্টোবর ধর্ষণবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ১২ অক্টোবর প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১৩ অক্টোবর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ১৪ অক্টোবর নারী সমাবেশ, ১৫ অক্টোবর ঢাকায় সাইকেল র্যালি।
সমাবেশ থেকে বলা হয়, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে নয় দফা দাবি মানা না হলে ১৬ অক্টোবর সকাল ৯টায় শাহবাগ থেকে বেগসমগঞ্জের উদ্দেশ্য লংমার্চ, ১৭ অক্টোবর বেগমগঞ্জে সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, ‘সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি করা হবে বলে আইনমন্ত্রী বলছেন। কিন্তু আইন করে অপরাধ দমন করা যায় না, কখনো যায়নি। সংস্কৃতি বদলাতে হবে, দেশের মানুষের জানমালের অবস্থান বদলাতে হবে। একটা নিরাপদ, সাম্যের সমাজ গঠন করতে হবে সকলের জন্য।’
রাষ্ট্রব্যবস্থায় ‘সংগঠিত ভণ্ডামি’ চলছে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববাদ্যালয়ের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘এই রাষ্ট্রটাই প্রতি মুহূর্তে ধর্ষিত হচ্ছে। রাষ্ট্র তো মায়ের মতন, এই দেশে যে অন্যায্যতা চলছে, তা স্বীকার করেই প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র ধর্ষিত হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে নানান উপায়ে ধর্ষিত হচ্ছি। আর ধর্ষকেদর পাহারা দিচ্ছে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা কেউ নিরাপদ নই। এটাই বর্তমান বাংলাদেশের চিত্র। কারো কোনো নিরাপত্তা নেই। শাসকগোষ্ঠী প্রতি মুহূর্তে ধর্ষক উৎপাদন করছে। যারা ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত তারা ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত দেখা যাচ্ছে।’
শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী মহাসমাবেশ
সমাবেশে বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। বিকালে শুরু হওয়া এই সমাবেশ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। দুপুর থেকেই বিভিন্ন সংগঠন শাহবাগে সমাবেশ করে আসছে। ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রীও অনশনে আছেন। ধর্ষক ও ধর্ষকের সহযোগী ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ, নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধে এবং ধর্ষক ও নির্যাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দুপুরে শাহবাগে মানববন্ধন করেছে ‘সেভ আওয়ার ওমেন’ নামের একটি সংগঠনও। ধর্ষণের প্রতিবাদে টিএসসিতে সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগও।
ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ধর্ষণের প্রতিবাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ