যমুনায় বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, দিশেহারা তীরবর্তী মানুষ
১০ অক্টোবর ২০২০ ১৮:৪২
সিরাজগঞ্জ: করোনা-বৃষ্টি-বন্যা এই তিন দুর্যোগে সিরাজগঞ্জের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে যমুনার পানি কমতে থাকায় ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে যমুনার পাড়ের মানুষেরা।
শনিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার সীমলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাঁচঠাকুরী গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ৩ দিনে ভাঙনে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি, বসতভিটা, গাছপালা, ফসলি জমি ও বৈদ্যুতিক খুটি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন ভাঙন কবলিত মানুষগুলো। একদিকে কর্ম নেই অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় জেলার প্রায় ৩০ হাজার ঘরবাড়ির মধ্যে একেক জনের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্যায় ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় ঘরের আসবাবপত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা নিক্ষেপ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ভাঙন কবলিতরা অভিযোগ করে জানান, চলতি বন্যায় পাঁচঠাকুরী এলাকায় চতুর্থবারের মতো এই ভা১ন দেখা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে এই এলাকায় বারবার ভাঙন দেখা দিচ্ছে। দ্রুত ভাঙন রোধ করা না হলে হুমকির মুখে পড়বে ব্রপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আশপাশের ২০টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মানের বাদী এলাকাবাসীর।
ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে থাকা জুরান আলী (৫৫) বলেন, ‘কাওয়াকোনা ইউনিয়নের শয়াশিখা গ্রামের বাড়িতে পানি ওঠায় প্রায় সাড়ে ৩ মাস ধরে বাঁধে রয়েছি। বর্তমানে ঘর-বাড়িতে পানি নেমে গেছে। কিন্তু ঘরের ভিতরে থাকা জিনিসপত্রসহ ধান, চাল নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে পানি নেই। কিন্তু ঘর-বাড়ি ওঠে বসবাস করার উপযোগী করতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাগবে। এখন টাকা পাবো কোথায়? এবারের বন্যায় আমাদের নিঃস্ব করে ফেলেছে।’
পাঁচঠাকুরী গ্রামের মোমেন আলী বলেন, ‘পানি কমার সাথে সাথে চোখের পলকে প্রায় ২০/৩০ বাড়ী নদী গর্ভে চলে গেল। ঠিকসময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করলে এই বাড়িগুলো নদী গর্ভে যেত না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতির কারণে আজ আমাদের এত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, পাঁচঠাকুরীতে ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলা শুরু করা হয়েছে। যমুনায় পানি কমতে থাকায় ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। এই নিয়ে যমুনা নদীর তীরবর্তী শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও কাজিপুর উপজেলার অনেক স্থানে এই ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ৪ দিনে এসব এলাকার শতাধিক ঘর-বাড়ি ও বহু জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তবে পাঁচঠাকুরীতে ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প অনুমোদনে পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী সেরাজুল ইসলাম জানান, যমুনার পানি কমতে থাকায় চৌহালীর বিভিন্ন স্থানে আবারও ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। এ ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ, ব্লক ও বালুর বস্তা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। তবে এখনও ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে তিনি জানান।