ফাঁসি নয় ধর্ষণের শাস্তি আমৃত্যু কারাদণ্ড দাবি শিক্ষার্থীদের
১১ অক্টোবর ২০২০ ১৫:০৪
ঢাকা: ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড দাবি করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বিরোধী আন্দোলনকে ফলপ্রসু করতে এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সাত দফা দাবি দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানহা তানজিন লিখিতভাবে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভিকারুননিসা নূন কলেজের চৌধুরী নদী ও তাসফিয়া তারান্নাম রিদিতা, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহিন আহমেদ এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাদিয়া আরাফাত সুচিতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
সাত দফা দাবিগুলোর মধ্যে আছে, ধর্ষণ আইন পুনঃবিবেচনার মাধ্যমে ধর্ষকের এবং সীমা ভেদে সকল প্রকার যৌন হয়রানির সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে করা। ভিকটিমের প্রাণ বিপন্ন করা রুখতে পরিবর্তনযোগ্য লঘু শাস্তির উল্লেখ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৭৫ ধারা অনুসারে উল্লেখিত ধর্ষণের সম্মতির সংজ্ঞা সংশোধন করতে হবে যাতে ধর্ষণের শিকার হওয়া ছেলে শিশু, পুরুষ, যৌনকর্মী, লিঙ্গ বৈচিত্রময় মানুষ ও হিজড়ারাও যেন আইনের শরণাপন্ন হতে পারেন। পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও সামাজিক নিপীড়নের অভিযোগে নিরপেক্ষ বিচার করতে হবে। বৈবাহিক ধর্ষণকে ধর্ষণের আওতায় এনে বিচারকার্য করতে হবে।
ধর্ষণজনিত ঘটনা বা অপরাধের জন্য আলাদা দ্রুত বিচার ট্রাইনুনাল গঠন করা যেতে পারে। যাতে ৩০-৬০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা যা। পুর্ববর্তী সকল ধর্ষণ মামলার রায় আগামী ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারার বিলোপ অর্থাৎ জেরা করার সময় যাতে ধর্ষণের শিকার নারীকে পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারক চরিত্র, পেশা, পোশাক ইত্যাদি নিয়ে হেনস্তা না করে। হেনস্তাকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীদের মামলা পরিচালনাকালে লিঙ্গীয় সংবেদনশীল আচরণ করতে পুলিশ, আইনজীবী, বিচারক ও সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
নির্যাতিতার পরিবারের ওপর কোনা প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপ প্রয়োগ বা ধর্ষককে আশ্রয় প্রদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে।
দেশের প্রতিটি মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন শিক্ষাকে বাধ্যতামুলক করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক ও মিডিয়াতে এবং সাহিত্য নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন ও নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমুলক ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে।
সাইবার মাধ্যমকে আসন্ন করে নারীর প্রতি সর্ব প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করতে হবে, যারা স্থানীয় প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে অবকাঠামোর কাছে জবাবদিহি করবে। দেশের সকল প্রান্তে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের এসব দাবি মেনে নিয়ে যথাযথ আইন প্রণয়ন করে। দাবি মানা হলে পরবর্তীতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তানহা তানজিন বলেন, ‘একজনকে ফাঁসি দিলেই কি এদেশে ধর্ষণ বন্ধ হবে। ধর্ষণ তখনও বন্ধ হবে না। বরং এটা হতে পারে যে, ধর্ষক যখন মনে করবে, আমার তো ফাঁসি হয়ে যাবে। তখন মেরেই ফেলি। এটা হিতের বিপরীত হবে। তাই আমরা আমৃত্যু যাবজ্জীবন চাই।’
সারাবাংলা/ইউজে/এমআই