Sunday 20 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্কুলছাত্র খুনের পর জেল ঘুরে ফের অপরাধ চক্রে ২ তরুণ


১১ অক্টোবর ২০২০ ২০:১২ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০ ২২:২৫
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছিনতাইয়ের একটি ঘটনায় সম্পৃক্ততা পেয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে ‘কিশোর গ্যাং’ অপরাধে জড়িত দুই তরুণকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আড়াই বছর আগে এক স্কুলছাত্রকে খুনে জড়িত ছিল তখনকার কিশোর বয়সী এই দুজন। ওই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে কিশোর গ্যাং কালচারের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল তারা। গ্রেফতার হয়ে জেল-সংশোধনাগার ঘুরে এসেও তারা এখনও বের হতে পারেনি সেই অপরাধ জগৎ থেকে।

শনিবার (১০ অক্টোবর) রাতে নগরীর চকবাজার থানার গণি বেকারির মোড় থেকে কিশোর গ্যাংয়ের এই দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) আলী হাসান।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার দু’জন হল- আব্দুল্লাহ আল সাঈদ (২১) ও এখলাছ উদ্দিন আরমান (২০)। দুজনের বাসা নগরীর চকবাজার থানার চন্দনপুরা এলাকায়।

গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহ মো. আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নগরীর জামালখানে সেন্টপ্লাসিড স্কুলের কাছে কথিত মামার দোকানের সামনে বসে তারা আড্ডা দেয়। কথায়-কথায় মারামারি করে। মাদক সেবন করে। চুরি-ছিনতাইয়েরও অভিযোগ আছে। খুলশী এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্য পেয়ে গ্রেফতার করেছি। চকবাজার ও কোতোয়ালী থানা মিলে সাঈদের বিরুদ্ধে তিনটি ও আরমানের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা আছে।’

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নগরীর জামালখানে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আদনান ইসফার (১৩) নামে এক কিশোর আরেকদল কিশোরের ছুরিকাঘাতে খুন হয়। আদনান ছিল কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা এলজিইডিতে কর্মরত প্রকৌশলী। নগরীর জামালখানে প্রেসক্লাব ভবনের পেছনে তাদের বাসা।

এই ঘটনার পর সাঈদ ও আরমানসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তখন সাঈদ ইসলামিয়া কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের এবং আরমান হোসেন আহমেদ চকবাজারের হলি ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

এডিসি রউফ জানান, গ্রেফতার পরবর্তী প্রেক্ষাপটে পড়ালেখা ছেড়ে দেয় সাঈদ ও আরমান। জেল-সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে তারা আবারও আগের অপরাধ চক্রে জড়িয়ে পড়ে।

গ্রেফতারের পর ১৯ জানুয়ারি পাঁচজনই আদালতে জবানবন্দি দেয়। মূলত সেই খুনের ঘটনা ও জবানবন্দির পরই চট্টগ্রাম শহরে কিশোর গ্যাং ও তাদের অপরাধের তথ্য প্রথমবারের মতো উঠে আসে গণমাধ্যমে। সেই খুনের ঘটনায় জড়িতদের অভিযানেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিএমপির তৎকালীন উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ।

বর্তমানে গোয়েন্দা কর্মকর্তা রউফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবার অগোচরে চট্টগ্রাম শহরে কিশোর গ্যাং কালচার গড়ে উঠেছিল। স্কুলছাত্রকে খুনের মধ্য দিয়ে মূলত কিশোর অপরাধীদের অস্তিত্ব প্রকাশ হয়েছিল। তখন আমরা প্রথম দক্ষিণ জোনে কিশোর অপরাধীদের তালিকা করি এবং ছয়টি স্পট চিহ্নিত করি- যেখানে তাদের দৌরাত্ম্য বেশি। তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের তথ্য পাই গ্রেফতার হওয়া কিশোর অপরাধীদের জবানবন্দিতে। এরপর পুরো চট্টগ্রাম শহরেই কিশোর অপরাধীদের তালিকা হয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম শুরু হয়।’

স্কুলছাত্র খুনের ঘটনায় জড়িতরা চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফের অনুসারী কিশোর গ্রুপের সদস্য বলে গণমাধ্যমে সেসময় তথ্য প্রকাশ হয়েছিল। গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, রউফের হয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করত কথিত ছাত্রলীগ নেতা এনাম হোসেন। তিনি সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

গত শুক্রবার (৯ অক্টোবর) নগরীর চকবাজার থানা পুলিশ ওই এলাকার আরেক কিশোর গ্যাং লিডার অন্তু বড়ুয়াকে গ্রেফতার করে। অন্তু ওই এলাকার কথিত যুবলীগ নেতা কারাবন্দি নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অপরাধ চক্র কলেজছাত্র খুন কালচার কিশোর গ্যাং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর