বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের চিন্তা করছে সরকার
১২ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৫৭
ঢাকা: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী-পিইসি এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা-জেএসসি পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে বিদ্যালয়গুলোতে যে বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের চিন্তা করা হচ্ছিল, সে সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই বিকল্প উপায়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। তবে তা কোন উপায়ে হবে তা শিগগিরই সকলের কাছে তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
মাধ্যমিকে মূল্যায়ন: সংশ্লিষ্ট সুত্র থেকে জানা গেছে, আগের বছরের পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়নের মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে যে, চলতি শিক্ষাবর্ষে যদি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া না যায় আর যদি পরীক্ষা নিতে পারে তবে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে প্রধান বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেওয়ার। অনলাইনের ক্ষেত্রে যেমন, বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞাস বিষয়ের পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া হতে পারে। এর জন্য প্রতিটি বিষয়ে পূর্ণমান ৫০ থাকবে। আর যে সব শিক্ষার্থীর অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার অবস্থায় থাকবে না তাদেরকে আগের বছরের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন করে পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হবে। এমন বহুমুখি প্রস্তাব জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবি’র সদস্য প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বর্তমান শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীরা কতটুকু পাঠদান পেয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার মধ্যে অনলাইন, টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কতটুকু পাঠদান পেল। এ সব পর্যালোচনা করে কী উপায়ে পরীক্ষার আয়োজন করা যায়, কিংবা যদি না করা যায় তবে বিকল্প কি হতে পারে এমন বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা থেকে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখন কোন পদ্ধতিতে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে তা দ্রুতই শিক্ষামন্ত্রী সকলকে জানাবেন।’
উচ্চ মাধ্যমিকে মূল্যায়ন: এদিকে বর্তমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সরাসরি উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার গড় ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নে জিপিএ-৫, পাসের গড় মার্কসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে নিয়ে পরিকল্পনা করছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
সূত্রে জানা গেছে, যে সব শিক্ষার্থী জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল তাদেরকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ দেওয়া হবে। তবে যে শিক্ষার্থী জেএসসি-৫ পেয়েছে কিন্তু এসএসসিতে ৪.৫০ পেয়েছে তারা এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাবেন না। আর বিষয়ভিত্তিক ফল নির্ধারণে জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পর্যায়ের বিষয় অনুযায়ী ম্যাপিং করা হবে। অর্থাৎ এই তিনপর্যায়ে যে বিষয়গুলোর মিল পাওয়া যাবে সেগুলোকে একভাবে দেখা হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দিক থেকে মূল্যায়নের চিন্তা করছি। যে দিকটা আন্তর্জাতিকমানের এবং প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকবে না এমন একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাই।’
প্রাথমিকে মূল্যায়ন: এদিকে আগের ক্লাসের ফলাফলের ভিত্তিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার চিন্তা করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক পরীক্ষার আয়োজন করা যাচ্ছে না বলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. সোহেল আহমেদ জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া কিংবা পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাই বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আগের ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার দিকও চিন্তা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যা এখন পর্যন্ত আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এই ছুটির কারণে এইচএসসি পরীক্ষাসহ কোনো পর্যায়ের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।