ঢাকায় ৪৫% মানুষের করোনা অ্যান্টিবডি পজিটিভ, বস্তিতে ৭৪%
১২ অক্টোবর ২০২০ ১৭:১৯
ঢাকা: রাজধানীর ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অ্যান্টিবডি পজিটিভ পাওয়া গেছে। বস্তি অঞ্চলে এই হার আরও বেশি— প্রায় ৭৪ শতাংশ। জাতীয় পর্যায়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর এক যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৮ এপ্রিল থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে এই জরিপটি চালানো হয়।
সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকায় কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ পরিস্থিতি ও জিন রূপান্তর বিষয়ে রাজধানীর হোটেল লেকশোরে আয়োজিত এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন- ‘হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছানো নিয়ে সিদ্ধান্তে যাওয়া ভুল হবে’
এতে বলা হয়, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও বেসরকারি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) যৌথভাবে এই গবেষণা করেছে। এই গবেষণায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএ আইডি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
জরিপের তথ্য তুলে ধরে সেমিনারে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকার ২৫টি ওয়ার্ডে ১২ হাজার ৬৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে। গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকা শহরে ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পজিটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়াও বস্তি এলাকার ৭৪ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সী ২৪ শতাংশ। অন্যদিকে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীর পরিমাণ ১৮ শতাংশ।
গবেষণার জন্য ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্য থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ২৫টি ওয়ার্ড বেছে নেওয়া হয়। প্রতি ওয়ার্ড থেকে একটি মহল্লা বাছাই করা হয়। প্রতি মহল্লা থেকে ১২০টি খানা জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ৮টি বস্তিকে এ জরিপে যুক্ত করা হয়। ঢাকা শহরের সাধারণ খানার নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত। আর বস্তির মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত।
সেমিনারে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা অনুমান করছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল।
গবেষকেরা বলছেন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা ও টিকা দেওয়ার ব্যাপারে এসব তথ্য কাজে লাগবে। গবেষণার তথ্য এমন সময় প্রকাশ করা হলো যখন দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আলোচনা চলছে। আসন্ন শীত মৌসুমে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের আছে।
অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন আইইডিডিআর ও আইসিডিডিআরবির গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে জুমের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা দ্রুত পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, যার সুফল দেশের মানুষ পেয়েছে।
তিনি বলেন, অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ভালো করেছে, ভালো আছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১ থেকে ১০৯টা ল্যাব হয়েছে, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্যান্য সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডি মিশনের পরিচালক ডেরিক এস ব্রাউন ও আইসিডিডিআরবি’র বাংলাদেশ নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. তাহমিদ আহমেদ।