Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কোভিড-১৯ পজিটিভদের ৮২ শতাংশই লক্ষণ-উপসর্গহীন’


১৩ অক্টোবর ২০২০ ০১:২৯

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের মধ্যে ৮২ শতাংশই লক্ষণ-উপসর্গহীন। লক্ষণ ছিল মূলত ছয় শতাংশের মধ্যে। এছাড়া ১২ শতাংশের মাঝে প্রিসিম্পটোমেটিক ছিল। রাজধানীতে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মাঝে বস্তিতে আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ৭ ভাগ।

সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকায় কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ পরিস্থিতি ও জিন রূপান্তর বিষয়ে রাজধানীর হোটেল লেকশোরে আয়োজিত এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

এতে বলা হয়, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও বেসরকারি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) যৌথভাবে এই গবেষণা করেছে। এই গবেষণায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএইড এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

জরিপের তথ্য তুলে ধরে সেমিনারে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকার ২৫টি ওয়ার্ডে ১২ হাজার ৬৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পজিটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়াও বস্তি এলাকার ৭৪ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সী ২৪ শতাংশ। অন্যদিকে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীর পরিমাণ ১৮ শতাংশ।

আইইডিসিআর সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান সেমিনারে গবেষণায় প্রাপ্ত নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে জানান, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৮২ ভাগের কোনো লক্ষণই ছিল না, ছয় ভাগের লক্ষণ ছিল, ১২ ভাগ প্রিসিম্পটোমেটিক।

জরিপ বিষয়ে আইইডিসিআর ও আইসিডিআর’বিসহ ইউএসএইড ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এতদিন ধরে আমরা জানতাম পুরুষরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছে, মহিলাদের মধ্যে তুলনামূলক কম। এই জরিপ থেকে দেখা গেছে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে খুব একটা বেশি পার্থক্য নেই। সববয়সের মানুষেরাই কিন্তু আক্রান্ত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকের ধারণা ছিল বস্তিতে সংক্রমণ কম হচ্ছে। সেই কারণে এই জরিপের সঙ্গে বস্তি এলাকাকে যুক্ত করা হয় পরে। আমরা দেখতে পাই সেখানেও আক্রান্ত রয়েছে। তুলনামূলকভাবে কম হলেও এই সংখ্যাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে বলতে চাই, আসলে কেউই নিরাপদ না। যারা এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হননি তাদের একটা কারণ হতে পারে যে, তারা হয়তো কোভিড-১৯ আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসেননি। আরেকটি কারণ হতে পারে এমন যে, তিনি স্বাস্থ্য বিধির সব কিছুই মেনে চলেছেন।’

স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনতৈরি হয়নি। এখনও তৃতীয় ফেইজের ট্রায়ালে আছে। ভ্যাকসিন কবে হবে সেটাও সময়সাপেক্ষ বিষয়। সুতরাং নিরাপদে থাকার জন্য আমাদের সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দুরত্ব মেনে চলাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যারা পজিটিভ তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৮২ শতাংশের কোনো লক্ষণ-উপসর্গ নেই। তার মানে এমন হতে পারে, আপনি যার পাশে বসে আছেন তিনি হয়তো পজিটিভ, কিন্তু লক্ষণ-উপসর্গ না থাকার কারণে বোঝা যাচ্ছে না। যখন কারও লক্ষণ-উপসর্গ হয় আমরা তাকেই আইসোলেশন করে জোর দিয়ে থাকি। কিন্তু যার লক্ষণ-উপসর্গ নেই তার বিষয়ে বোঝা কিন্তু কষ্টসাধ্য। সুতরাং কার আছে, কার নেই সেই চিন্তা না করে আমাদের প্রত্যেকের মাস্ক পড়া উচিত। এর কোনো বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাত ধোয়ার অভ্যাস প্রতিনিয়ত করে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে যেন ভিড় না করি। আজকাল দেখছি অনেকক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। আমি অনুরোধ করে বলব, সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন। এর কোনো বিকল্প নেই। সেটাই আমাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ রোধ করতে পারে।’

সেমিনারে জানানো হয়, গবেষণার জন্য ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্য থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ২৫টি ওয়ার্ড বেছে নেওয়া হয়। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে একটি মহল্লা বাছাই করা হয়। প্রতি মহল্লা থেকে ১২০টি খানা জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া আটটি বস্তিকে এ জরিপে যুক্ত করা হয়। ঢাকা শহরের সাধারণ খানার নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত। আর বস্তির মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হয় মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত।

করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা অনুমান করছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল। গবেষকেরা বলছেন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা ও টিকা দেওয়ার ব্যাপারে এসব তথ্য কাজে লাগবে। গবেষণার তথ্য এমন সময় প্রকাশ করা হলো যখন দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আলোচনা চলছে। আসন্ন শীত মৌসুমে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবধরনের প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।

অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন আইইডিডিআর ও আইসিডিডিআরবির গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুত পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। যার সুফল দেশের মানুষ পেয়েছে। অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ভালো করেছে, ভালো আছে।’ এ পর্যন্ত ১ থেকে ১০৯টা ল্যাব হয়েছে, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাইফ্লো-ন্যাজাল ক্যানোলাসহ অন্যান্য সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএইড মিশনের পরিচালক ডেরিক এস ব্রাউন ও আইসিডিডিআরবি’র বাংলাদেশ নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. তাহমিদ আহমেদ।

৮২ শতাংশ আইইডিসিআর আইসিডিডিআরবি করোনা সংক্রমণ কোভিড-১৯ গবেষণা পজিটিভ লক্ষণ-উপসর্গহীন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর