মোংলায় স্কুল খুলে বেতন আদায়, পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত!
১৩ অক্টোবর ২০২০ ০৮:১২
মোংলা (বাগেরহাট): করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মধ্যে সারাদেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। সরকারও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার ভাবছে। ঠিক সেই সময়ে মোংলার সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে স্কুল খুলে দিয়ে বেতন আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, খ্রিষ্টান মিশনারিজের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত স্কুলটির শিক্ষার্থীদের ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস। রীতিমতো তারা বার্ষিক পরীক্ষার আয়োজন করছে!
সেন্ট পলস স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে তারা স্কুল খুলেছেন এবং বার্ষিক পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও শিক্ষা কর্মকর্তা এমন কোনো অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে সেই মার্চ মাস থেকে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধই থাকছে। শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করতে নভেম্বর-ডিসেম্বরে স্কুল খোলার গুঞ্জন ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই গুঞ্জন বাস্তবায়নের কোনো ইঙ্গিত নেই। বরং বিকল্প কোন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা যায়, সে বিষয়টি ঠিক করতে কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষা সংক্রান্ত দুই মন্ত্রণালয়।
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী সেই মার্চ থেকে মোংলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই আচমকা গত সপ্তাহে মোংলার সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফোন করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ‘জরুরি প্রয়োজনে’ বিদ্যালয়ে যেতে বলেন। সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকরা স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস ধরিয়ে দেন। একইসঙ্গে বেতনও আদায় করেন। যারা তাৎক্ষণিকভাবে বেতন দিতে পারেননি, তাদের পরে দ্রুত বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, স্কুল থেকে স্যারেরা খবর দেওয়ায় তাদের স্কুলে যেতে হয়েছে। আর স্কুলে যাওয়ার পরপরই তাদের কাছ থেকে বেতন নেওয়া হয়েছে, দেওয়া হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস।
শিক্ষার্থীরা বলছে, ‘স্যারেরা আমাদের বলেছেন বার্ষিক পরীক্ষা হবে। তাই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।’ হঠাৎ করে স্কুলের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা বেশ হতচকিত।
অভিভাবক রবিউল ইসলাম টিটু বলেন, ‘সারাদেশে স্কুল-কলেজ সবই যখন বন্ধ, তখন এভাবে হঠাৎ করে শিক্ষার্থীদের ডাকা ঠিক হয়নি। আবার নাকি বার্ষিক পরীক্ষাও হবে। এতে করে তো করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবে শিক্ষার্থীরা।’
অন্য অভিভাকরাও বলছেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা বিবেচনা না করে এভাবে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে তারা শঙ্কিত।
স্কুলের দাবি অবশ্য ভিন্ন। জানতে চাইলে সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক চিরঞ্জিত সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আমরা সিলেবাস দিচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যেন বার্ষিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে, সেজন্যই সিলেবাস দেওয়া হচ্ছে। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
তবে স্কুলের এই দাবি অস্বীকার করছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার উল কুদ্দুস। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমি কোনো প্রতিষ্ঠানকে খুলতে বলিনি। বরং সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় খোলার কথা শুনে তাদের সতর্ক করেছি, তারা যেন আর স্কুল না খোলে।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার শ্যামাপদ জানান, সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ১৭শ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। স্কুল খুলে দেওয়া হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিতি হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে। সে কারণে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করেছেন বলে জানান শ্যামাপদ।
আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা, সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় যদি এ আদেশ না মেনে বিদ্যালয় খুলে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’