‘দুর্যোগ মোকাবিলায় শুধু স্বীকৃতি না, বাংলাদেশ পথ দেখাতে পারছে’
১৩ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৪৬
ঢাকা: দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন দেখাতে পেরেছি আন্তর্জাতিকভাবে। শুধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না, বাংলাদেশ পথ দেখাতে পারছে কিভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায়। মানুষকে সাথে নিয়ে কিভাবে করতে হবে সেটাও আমরা করে যাচ্ছি।
মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) সকালে আন্তর্জাতিক ‘দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২০’র উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। এছাড়া গাইবান্ধা ও বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন। এছাড়া ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে দুই জন সুবিধাভোগী মতবিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে বিভিন্ন শ্রেণির অনগ্রসর মানুষ ছিল। যেমন বেদে-হিজড়াসহ সাধারণ মানুষ। যাদের আসলে কখনও কোনো ঠিকানাও ছিল না, কোনো স্থায়ী জায়গাও ছিল না। সমাজে তাদের কোন স্থানও ছিল না। আমাদের চা বাগানের চা শ্রমিকরা, তাদের ব্রিটিশ আমলে নিয়ে আসা হয়েছিল চা পাতা তোলার জন্য কিন্তু তাদের কোনো আবাসস্থান ছিল না, কোন ঠিকানা ছিল না কোন দেশও ছিল না।’
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনি প্রথম তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে যান। আমাদের যে সংবিধান দিয়ে গেছেন সেই সংবিধানেও কিন্তু যারা অনগ্রসর জনগোষ্ঠী তাদের কল্যাণে কাজ করার কথা সুনির্দিষ্ঠভাবে উল্লেখ করা আছে। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা এখন বেদে হিজড়া থেকে শুরু করে সবাইকে তাদের একটা ঠিকানা দেওয়া, সমাজে পুনর্বাসন করা সেই ব্যবস্থাও নিয়েছি’, বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘সেই সাথে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলগুলি যেখানে জলোচ্ছ্বাস বা ঘুর্ণিঝড় কবলিত সেখানে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ সুবজবেষ্টনি তৈরি করা এবং সেই এলাকার মানুষের বসতগুলি যেন দুর্যোগ সহনীয় হয় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাশাপাশি যারা গৃহহারা যাদের ঘরবাড়ি নেই, তাদের ঘর করে দিচ্ছি এবং সেগুলো দুর্যোগ সহনীয় ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। কিছুক্ষণ আগে সেগুলি আমরা উদ্বোধনও করলাম।’
আমাদের বন্যা কবলিত এলাকা, বিভিন্ন সময় বন্যা আসে। বন্যার ভালও আছে মন্দও আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যেহেতু বদ্বীপ কাজেই বন্যা আমাদের মাটিকে উর্বর করে। যে মাটিটা সারা বছর বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়, সেটা আবার পুর্নবহন করে। আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভাল রাখে। কিন্তু বন্যার সাথে আমাদের বসবাস করতে হবে কিন্তু বন্যায় যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। সেজন্য আমরা ডেল্টা প্ল্যান নিয়েছি। অর্থ্যাৎ ২১০০ সাল পর্যন্ত এই বদ্বীপটাকে কিভাবে উন্নত করবো, আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়েও সেটা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমরা আমাদের সমস্ত নদীগুলিকে ড্রেজিং করে নব্যতা ও গভীরতা আমাদের খাল বিল, জলাধার যেগুলি আছে সেগুলি আবার পুর্নখনন করে সেখানে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।’ পাশাপাশি বন্যার সময় যাতে পানিটা ধারণ করতে পারে সেজন্য একটা সেই জায়গাটাও রাখতে হবে নদীর জন্য বলেও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন গৃহীত পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করছি। আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এই করোনাভাইরাসের কারণে যেভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনটা করার কথা ছিল কিন্তু আমরা সেভাবে পারিনি। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রায় ১ কোটি বৃক্ষরোপণের নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ থেকে শুরু কওে সকল সহযোগী সংগঠন মিলে মনে এতদিন আমরা এক কোটির উপরে গাছ লাগানোর সফলতা অর্জন করেছি।’
‘সমস্যা দেখা দিলে সেটা মোকাবিলা এবং দূর করাই লক্ষ্য’
এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে সেকথাও তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ তৈরি করে দিয়ে জলোচ্ছ্বাস থেকে দেশকে রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বৃক্ষরোপণ পদক্ষেপ নিচ্ছি। এবারে যখন আম্পান ঘূর্ণিঝড় এলো আমরা ২৪ লাখ মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে নিয়ে আমরা সেখানে শেল্টার দিয়েছি। এতো মানুষকে মনে হয় কোন দেশ পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ পেরেছে। আমরা পারি। জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা এদেশের স্বাধীনতা এনেছি মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। কাজেই অবশ্যই আমরা সেই অর্জন করতে পারবো।’
‘আপনারা জানেন যে ২০১৯ গ্লোবাল কমিশন এন্ড এডাপটেশন এই সভায় জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন তিনি দুর্যোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্ব অভিযোজন কেন্দ্র ঢাকা স্থাপনের ঘোষণা দেন। সেই প্রেক্ষিতে গত মাসে গ্লোবাল এডাপটেশন স্টোরের কার্যালয় স্থাপন করেছি। কারণ আমি বলবো যে, আমরাই একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন দেখাতে পেরেছি আন্তর্জাতিকভাবে। সেদিক থেকে শুধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না, বাংলাদেশ পথ দেখাতে পারছে কিভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করা যায়, মানুষকে সাথে নিয়ে কিভাবে করতে হবে? সেটাও আমরা করে যাচ্ছি’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য অপারেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার কাজও আমরা শুরু করেছি। যাতে যেকোন দুর্যোগ আসলেই সেখান থেকে আমরা যেন আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি। সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে দ্রুততার সাথে পূর্ব সতর্কীকরণ ও দুর্যোগ সম্পর্কিত তথ্য সকলকে অবহিত করার জন্য জাতীয় দুর্যোগ সমন্বয় কেন্দ্র এনডিআরসিসি স্থাপন করা হয়েছে। আমি এইটুকু বলবো যে, দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর আমাদের অভিজ্ঞতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকেই সেটা পেয়েছিলাম। আর সেই অভিজ্ঞতা কাজেই লাগিয়ে আমরা আজকে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই চলি। কাজেই তিনি আমাদেরকে যে পথ দেখিয়ে গেছেন সেই পথ দিয়েই আমরা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করবো।’
অঞ্চলভেদে দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের তারতম্যেও কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন এলাকায় এক একটা দুর্যোগ আছে। সেইগুলি থেকে ওই অঞ্চলের মানুষকে কিভাবে মুক্তি দেয়া যায়, কিভাবে তারা ভালভাবে বাঁচতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং আমাদের উন্নয়নটা সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী। এই দক্ষিণাঞ্চল অবহেলিত, বিভিন্ন এলাকা অবহেলিত, সব এলাকায় কিন্তু এখন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে। আর জাতির পিতার জন্মশথবার্ষিকীতে এটা আমাদের সিদ্ধান্ত, একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি বলে আজকে আপনাদের সাথে অন্তত সেই দূরে বসেও কথা শুনতে পাচ্ছি দেখতে পাচ্ছি এবং এটা সারাবাংলাদেশই এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। এই ঘুর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস বা যেকোন আবহাওয়ার পূর্বাভাস সরাসরি মানুষ পাচ্ছে।’ এটা অব্যাহত থাকবে ভবিষ্যতেও সকলে এটা অনুসরণ করে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।