জনশূন্য ক্যাম্পাস আগলে রেখেছিলেন তারা
১৪ অক্টোবর ২০২০ ১৪:২৫
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজানের কাঁপা কাঁপা সুর শূন্যে মিলিয়েছে বেশ আগে। পূবের আকাশ লাল হয়ে জানান দিচ্ছে সূর্য এই উঠল বলে। আশ্বিনের শেষ। কিছুটা হিম হিম ভাব কার্তিকের আগমনী ঘোষণা করছে। ভোরের আলো ফুটলেও খুলনা বিশ্ববদ্যিালয়ের (খুবি) ক্যাম্পাসে তখনো এখানে ওখানে ছোপ ছোপ জমাট অন্ধকার লেগে আছে। ভোরের এমন সুনসান ক্যাম্পাসেও ঘুমজাগা চোখে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে ফটক সংলগ্ন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
গত প্রায় ছয়মাস করোনায় স্বাস্থ্ ঝুঁকির কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ। ভোরের এমন জনশূন্য চিত্রই খুবি ক্যাম্পাসের গোটা দিনের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলার মাঠ থেকে শুরু করে ক্যাফেটেরিয়া কিংবা তপন ভাইয়ের দোকান, সবখানেই শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে রাজত্ব চলছে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা ঘাস আর লাতাপাতার। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য পেশাজীবীরা করোনায় ছুটি পেলেও ছুটি মেলেনি শুধু নিরাপত্তাকর্মীদের।
জনপ্রাণহীন নির্জীব ক্যাম্পাসে কেউ না থাকলেও নিরাপত্তাকর্মীদের ঠিকই থেকে যেতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে।
কথা হয় খুবির খান জাহান আলী হলের নিরাপত্তাকর্মী মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। করোনাকালীন এই ছুটির মধ্যে কেমন যাচ্ছে তাদের দিন জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ‘মার্চে বন্ধ শুরু হলে তো শিক্ষক আর ছাত্ররা সবাই চলে গিয়েছিলেন। শুধু আমাদের যাওয়া হয়নি। প্রথম দিকে খুব খারাপ লাগত। মনে হতো যেন একাকী এক ভয়াবহ পরিবেশে আছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক নিরাপত্তাকর্মী মো. হারুন বলেন, ‘আপনারা সবাই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেলেন। আমরা থেকে গেছিলাম ক্যাম্পাস পাহারা দেওয়ার জন্য। প্রথমদিকে তো খুব খারাপ সময় গেছে, শুধু আমরা ছাড়া কেউই ছিল না।’
ভোর মিলিয়ে সূর্য তখন বেশ ওপরে চলে এসেছে। জনমানবহীন ক্যাম্পাসে চারদিকে শুধু আলো থাইথই করছে। বেড়ে চলেছে দিনের তাপও। মো. হারুন দুঃখের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা কিছু কর্মচারী আছি যাদের চাকরি এখনো স্থায়ী না। সেকারণে আমরা ছুটিতে যেতে পারিনি। ছুটি কাটালে তো বেতন বন্ধ থাকে।’
নিরাপত্তাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করেছেন বলে জানান তাদের অনেকে।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিজস্ব উদ্যোগে অস্বচ্ছল কর্মচারীদের মধ্যে কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়েছিল। পরে কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়।‘ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মাঝে বেশকিছুদিনের ছুটিও পেয়েছিলাম। এখন সারাক্ষণ শুধু ভাবি, সবকিছু কবে ঠিকঠাক হবে।’
এই সব ক্যাম্পাস প্রহরীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কী ব্যবস্থা নিয়েছিল জানতে চাইলে ডেপুটি রেজিস্টার মো. শামীম-ই-জামান বলেন, ‘প্রথম দিকে নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও অফিসে জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া তারা ব্যক্তিগতভাবে সবাই মাস্ক ব্যবহার করে। প্রথম দিকে প্রশাসন থেকে তাদের কিছু মাস্কও দেওয়া হয়েছিল।’